ঢাকা
২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৪:৩৩
logo
প্রকাশিত : মে ২৮, ২০২৫

ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করছে নেতানিয়াহুর ‘অপরাধী চক্র’

গাজায় ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করছে। সেখানে ইসরাইল বর্তমানে একটি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যার কোনো লক্ষ্য নেই, পরিকল্পনা নেই, সাফল্যের কোনো সম্ভাবনাও নেই। প্রভাবশালী দ্য হারেৎজ পত্রিকায় এক মন্তব্য প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। তিনি আরও লিখেছেন, ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো এমন উদ্দেশ্যহীন যুদ্ধ চালানো হয়নি। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে থাকা ‘অপরাধী চক্র’ ইসরাইলের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ‘গিডিয়ন’ অভিযানের সুস্পষ্ট ফলাফল হলো গাজা ঘিরে ইসরাইলি সেনাদের বিশৃঙ্খল তৎপরতা। বিশেষ করে সেইসব এলাকায়, যেখানে আমাদের সেনারা আগেও যুদ্ধ করেছে, আহত হয়েছে, প্রাণ দিয়েছে- অনেক হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, যাদের মৃত্যু প্রাপ্য এবং বহু নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকেও হত্যা করেছে। এদের সবাই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বেড়ে চলা অকারণ মৃত্যুর পরিসংখ্যানের অংশ হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও লিখেছেন, গাজায় সাম্প্রতিক অভিযানের সঙ্গে কোনো বৈধ লক্ষ্যের সম্পর্ক নেই। সরকার সেনাদের পাঠাচ্ছে, আর সেনাবাহিনী তা পালন করছে- গাজা সিটি, জাবালিয়া এবং খান ইউনুসের আশেপাশে ঘোরাফেরার জন্য। এটা এখন একটা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক যুদ্ধ। এর তাৎক্ষণিক ফল হলো গাজাকে এক মানবিক বিপর্যয় অঞ্চলে পরিণত করা। গত এক বছরে ইসরাইল সরকার এবং সেনাবাহিনীর গাজায় কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে কঠিন অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও আছে। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় স্তরে বহু বিতর্কে আমি এই অভিযোগগুলোর বিরোধিতা করেছি, যদিও সরকারের সমালোচনা করতেও পিছপা হইনি। আমি বলেছি- হ্যাঁ, অতিরিক্ত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কিন্তু কোনও সরকারি নির্দেশে নির্বিচারে বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। ফলে আমি বিশ্বাস করতাম, যুদ্ধাপরাধ ঘটেনি। আমি আইনত ‘গণহত্যা’ এবং ‘যুদ্ধাপরাধ’ শব্দদ্বয়ের তাৎপর্যকে গুরুত্ব দিতাম। প্রতিটি মঞ্চে বলেছি- হ্যাঁ, আমাদের উদাসীনতা এবং গাজাবাসীর প্রতি অবহেলা ছিল, কিন্তু তা যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ নয়। কিন্তু এখন আমি আর তা বলতে পারি না। এহুদ ওলমার্ট আরও লিখেছেন, আমরা এখন যে যুদ্ধ চালাচ্ছি তা ধ্বংসাত্মক, অগণতান্ত্রিক, নিষ্ঠুর এবং অপরাধমূলক। এটি কোনও নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে নয়, কোনও ইউনিটের বিচ্যুত আচরণের কারণে নয়। এটি এক সুপরিকল্পিত সরকারি নীতির ফলাফল- জেনে শুনে, মন্দভাবে, দায়িত্বহীনভাবে আরোপিত যুদ্ধ। হ্যাঁ, ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করছে।

তিনি লিখেছেন, প্রথমত, গাজাকে না খাইয়ে মারার নীতি নেয়া হয়েছে। সরকারি নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, আমরা গাজার মানুষকে খাদ্য, ওষুধ, এবং ন্যূনতম মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করছি একটিমাত্র কারণেই: তারা গাজাবাসী, অর্থাৎ ‘সবাই হামাস’। তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলাই আমাদের উদ্দেশ্য। নেতানিয়াহু এখন এ ধরনের আদেশের দায় এড়াতে তা ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন। তবে তার ঘনিষ্ঠ লোকেরা প্রকাশ্যে গর্বের সঙ্গে বলছেন- হ্যাঁ, আমরা গাজাকে অনাহারে মারবো।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এহুদ ওলমার্ট লিখেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার, ডাচ প্রধানমন্ত্রী, ইতালির জর্জিয়া মেলোনি- এরা কেউই ইসরাইলবিরোধী নন, বরং নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে। ম্যাক্রন বলেছেন: আমরা তোমার পাশে থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র রুখেছি, আর তুমি আমাদের সন্ত্রাসবাদের সমর্থক বলছ? এখন কানাডা, বৃটেন, ফ্রান্সের মতো ইসরাইলঘনিষ্ঠ দেশগুলো ইসরাইল সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইসরাইলের চুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব উঠেছে।

তিনি আরও লিখেছেন, নেতানিয়াহুর এই সরকার বলবে ‘সবাই আমাদের ঘৃণা করে, এরা সবাই ইহুদিবিদ্বেষী।’ কিন্তু না। এই দেশগুলো ইহুদিবিদ্বেষী নয়, তারা ইসরাইলি জনগণের ওপর নেতানিয়াহু সরকারের চাপ এবং নৃশংসতা দেখে আতঙ্কিত। আমি একমত যে, এই সরকার এখন দেশের ভেতরের শত্রু। ইসরাইলের ইতিহাসে এত বড় ক্ষতি আর কেউ করেনি- না কোনো বাহ্যিক শত্রু, না কোনো যুদ্ধ। এই সরকার সমাজের ঐক্য, পারস্পরিক সহযোগিতা, সহনশীলতা- সব কিছুই নষ্ট করছে। বন্দিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা তো করছে না-ই, বরং ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে, সেনাকে সেনার বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছে।

তিনি লিখেছেন, ওদিকে পশ্চিম তীরেও চলছে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের উপর নৃশংসতা। ‘হিলটপ ইয়ুথ’ নামের চরমপন্থি বসতি স্থাপনকারীরা প্রতিদিন অপরাধ করছে- পুলিশ এবং সেনাবাহিনী চুপচাপ চোখ বুজে থাকছে। যোসি দাগান বলছেন: প্যালেস্টাইনি গ্রামগুলো ধ্বংস করতে হবে। এটি সরাসরি গণহত্যার ঘোষণা। এমনকি সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিটগুলোতেও বহুবার দেখা গেছে- বেসামরিক মানুষদের ওপর নির্মম গুলিবর্ষণ করতে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করতে, লুটপাট করতে, সামাজিক মাধ্যমে সেনাদের উল্লাস করতে।

এটা যুদ্ধাপরাধ নয় তো কী?
আমি এখন বিশ্বাস করি- আমরা হয়তো সেদিকেই এগোচ্ছি, যেখানে জাতিগত নির্মূল কথাটাও আর অস্বীকার করার উপায় থাকবে না।
এই যুদ্ধ থামাতে হবে এখনই। না হলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড়াতে হবে এবং তখন আর কোনো ভালো ব্যাখ্যা থাকবে না। এবার যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram