মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছে, তারা চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা ‘আগ্রাসিভাবে’ বাতিল করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সংযুক্ত বা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়বে। রুবিও আরো বলেন, ভবিষ্যতে চীন এবং হংকং থেকে আগত ভিসা আবেদনকারীদের অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণের জন্য ভিসা মানদণ্ড পুনর্বিবেচনা করা হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি হয়েছে।
বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব এবং ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কনীতির ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। সোমবার রুবিও বিশ্বের সব মার্কিন দূতাবাসকে নির্দেশ দেন যেন তারা নতুন শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকার বন্ধ রাখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেদনকারীদের কার্যকলাপের ওপর বাড়তি নজরদারির প্রস্তুতি নেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার চীনা শিক্ষার্থী আমেরিকায় পড়াশোনা করেছে। একসময় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, তবে মহামারিকালীন বিধি-নিষেধ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অবনতির কারণে সেই সংখ্যা কমে এসেছে।
রুবিও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র দপ্তর ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ একত্রে কাজ করবে, যাতে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা যায় — বিশেষ করে যারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অথবা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেমন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান অধ্যয়ন করছে।’ এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এবং হাজার হাজার ভিসা বাতিল করেছে, যদিও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ আদালতের দ্বারা আটকে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর, তাদের ‘অতি উদারপন্থা’ এবং ক্যাম্পাসে ইহুদি বিরোধিতার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে। বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ টিউশন ফি আদায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল।
শাংহাইয়ের এক ২২ বছর বয়সী মাস্টার্স শিক্ষার্থী, তিনি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, বিবিসিকে বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে অনুতপ্ত।’ চীন এখনো এই নতুন সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে আগেই তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ‘বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিবিসির প্রাপ্ত একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মার্কিন দূতাবাসগুলোকে শিক্ষার্থীদের নতুন ভিসা সাক্ষাৎকার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যদিও পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকারগুলো বহাল থাকবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং আদালত সাময়িকভাবে তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি অনুমোদন বাতিলের প্রচেষ্টা ঠেকিয়েছে।
হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক আদালতে জানান, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘চরম মানসিক চাপ’ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সমাবর্তন বাদ দিচ্ছেন, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বাতিল করছেন এবং কেউ কেউ অন্য কলেজে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। কিছু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমনকি যুদ্ধ বা রাজনৈতিক নিপীড়নের দেশেও ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি