ঢাকা
৩০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৫৮
logo
প্রকাশিত : মে ২৯, ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘আয়নাবাজি’: ১২ বছর পর ধরা নকল ‘আনসারী’

একজনের পরিবর্তে আরেকজনের চাকরি করে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে, তাও এক যুগ ধরে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের তদন্তে ধরা পড়েছেন তিনি। তদন্তে ধরার পর সম্প্রতি সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ওই ব্যক্তি অন্য একজন প্রকৃত কর্মকর্তা ‘আবদুল ওয়ারেছ আনসারী’ এর পরিচয়, কাগজপত্র ও পরীক্ষার ফলাফল ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ভুয়া আনসারীর প্রকৃত নাম মো. শাহজালাল। তিনি গাজীপুর ঠিকানায় তৈরি করা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাল সনদ ব্যবহার করে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুইটি পদোন্নতিও পান- সবশেষ তিনি যুগ্ম পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এই জালিয়াতির মূল সহায়ক ছিলেন তার চাচা মো. শাহজাহান মিয়া। শাহজাহান মিয়া ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিভাগে উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং পরে অতিরিক্ত পরিচালক পদে উন্নীত হন। চাকরিতে ভুয়া ব্যক্তিকে ঢোকাতে গিয়ে শাহজাহান মিয়া অফিসিয়াল প্রক্রিয়া ও তথ্যাদি টেম্পারিং করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর আগে, ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া এক নারী কর্মকর্তার বাবার সনদ ভুয়া প্রমাণিত হলে তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়। সেই ঘটনায়ও শাহজাহান মিয়ার সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছিল।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া সব কর্মকর্তার তথ্য পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও অফিস আদেশ এখনো জারি হয়নি।

প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর বোনজামাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। সম্প্রতি রাজশাহী অফিসে এক কাজের সূত্রে গিয়ে সেখানে ‘আবদুল ওয়ারেছ আনসারী’ নামের নেমপ্লেট দেখে ছবি তুলে পাঠালে পুরো বিষয়টি সামনে আসে। প্রকৃত ব্যক্তি মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) হিসেবে কর্মরত।

তিনি জানান, “আমি ২০১৩ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ না দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারেই যোগ দেই। পরে জানতে পারি, আমার পরিচয়ে কেউ ব্যাংকে চাকরি করছে।”

গত ২৭ মে ভুয়া আনসারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। অফিস ও বাসায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার চাচা শাহজাহান মিয়াও ফোন বন্ধ রেখে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জানা যায়, পুলিশের অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা 'আবদুল ওয়ারেছ আনসারী' সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া কাগজপত্রের মধ্যে কোনও মিল পাওয়া যায়নি। এসব দেখে পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক করে। এরপর ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও প্রতারণার প্রমাণ মেলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, “তদন্তে প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবেওই ভুয়া কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত চাচা শাহজাহান মিয়াকেও সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত চলছে।”

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram