মো: সেলিম মিয়া, নরসিংদী: নরসিংদী জেলা সদরের সাথে উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের জনগণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এই চরাঞ্চলের বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শহরে যাতায়াতে তাদের সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এতে জীবনের ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দুর্ঘটনা এবং যাতায়াতের অত্যাধিক খরচ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার এই ইউনিয়নে ৯টি গ্রামে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের বসবাস। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার হলেও নদীতে সেতু না থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে চরমে। এলাকার কৃষক শ্রমিক জেলে তাঁতি শিক্ষার্থী ও রোগে আক্রান্ত সবাইকে প্রতিদিন নদী পারাপারের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। মেঘনা নদীতে শুধু একটি মাত্র ব্রিজের অভাবে মানুষের এই দুর্দশা। নদীপথে যাত্রা শুধু সময়সাপেক্ষই নয়, বর্ষা মৌসুমেও পানিতে সমস্ত কিছু একাকার হয়ে যায়। তারপরেও রয়েছে কচুরিপানার চরম দাপট। এতে নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচলরত যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
আলোকবালী গ্রামের রুবেল আহমেদ বলেন, নদীতে সেতু না থাকায় নৌকায় আসতে কচুরিপানার জন্য এক ঘণ্টার রাস্তা ৩-৪ ঘণ্টায় লাগছে। রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে পারি না। অনেক সময় প্রেগন্যান্ট মহিলারা মাঝপথে সন্তান প্রসব করেন। কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারি না। শিক্ষার্থীরাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মাত্র তিনশত থেকে সাড়ে তিনশত মিটার দীর্ঘ একটি সেতু হলে আমাদের সমস্যা অনেকটাই কমে যেত।
বাখরনগর গ্রামের আহমদ মিয়া বলেন, আমার বাবার বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে একদিকে কচুরিপানা অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছু দেখা যায়নি। যার কারণে কোনো নৌকা শহরে আসতে রাজি হয়নি। পরে ভোর বেলায় নৌকায় প্রায় দেড় ঘন্টা বিলম্বে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি, ততক্ষণে তিনি বড়ো ধরনের হার্ট অ্যাটাক করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদের জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এ রেফার্ড করলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে পৌছে হাসপাতালের মেইন গেইটে প্রবেশ করতেই বাবা মারা যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে তাকে বাঁচানো যেতো।
আলোকবালী গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, "আলোকবালী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য আমির সরকারকে গত ২২ এপ্রিল স্থানীয় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি রাস্তায় মারা যায়। পাশাপাশি শহরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ না থাকায় প্রশাসন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে, সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি ব্যাপক হারে বাড়ছে।
নরসিংদীর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ফুলকাম বাদশা বলেন, আমি নিজে পরিদর্শনে গিয়ে কচুরিপানায় তিন ঘণ্টা নৌকায় আটকে ছিলাম। বিষয়টি আমি উপলব্ধি করেছি। ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। আলোকবালী থেকে করিমপুরের শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় তিনশত মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আলোকবালীর বাসিন্দা মো: তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমাদের এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে মেঘনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি।
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার বলেন, “অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন। আমি নিজেও নৌপথে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছি। তাদের সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
একটি সেতুর অভাবে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, প্রশাসনসহ মৌলিক অধিকারের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আলোকবালীর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এলাকাবাসী চায়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সেতু নির্মাণ করে এ জনদুর্ভোগের অবসান ঘটানো হোক।