ঢাকা
৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:৫৪
logo
প্রকাশিত : জুন ৩০, ২০২৫

সাতকানিয়ায় শিক্ষককে গাছের খুঁটিতে বেঁধে মারধর, গ্রেপ্তার দুই

রমজান আলী, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে আব্দুর রহমান নামে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে দোকানের গাছের খুঁটির সাথে বেঁধে এলোপাতাড়ি মারধরের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় রোববার (২৯ জুন) রাতে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারনামীয় আব্দুল হান্নান (৪১) ও তার সহোদর আবু বক্কর (৫৫) কে গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শামসুল ইসলামের ছেলে। এদের মধ্যে হান্নান সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নাজির হিসেবে কর্মরত। মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আবু বক্করের ছেলে মুসলিম উদ্দিন হিরু (২৬), তাদের সহোদর মো. হানিফ (৪৫), মো. সোহাগ (৪৩) ও মোহাম্মদ ইকবাল (৩৮) সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৬-৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এদিকে গুরুতর আহত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আবদুর রহমান বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বুচির পাড়ার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে।

মারধরের এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও শনিবার (২৮ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ব্যাপক ভাইরাল হলে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অনেকেই এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, দীর্ঘদিন পূর্বে প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমানের পরিবারের সাথে মামলার বিবাদীদের সাথে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সে সময় সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা হয়। শিক্ষক আবদুর রহমানের ভাই-বোনেরা বিবাদীদের পরিবারকে কিছু জায়গা বিক্রি করেছিল। কিন্তু আবদুর রহমান তার অংশ বিক্রি করেননি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৭জুন) রাতে শিক্ষক আবদুর রহমানকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদার হাট বাজারে অভিযুক্ত মো. হানিফ তার মুদির দোকানে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সকল অভিযুক্তরা মিলে শিক্ষক আবদুর রহমানকে হানিফের দোকানের একটি খুঁটির সাথে রশি দিয়ে বাঁধেন। এরপর এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, চর-থাপ্পর ও লাঠি দিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয় প্রধান শিক্ষককে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান। এ ঘটনার পরদিন শনিবার (২৮ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ওই প্রধান শিক্ষককে দোকানের খুঁটির সাথে রশি দিয়ে বেঁধে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়।

প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ও মামলার বিবাদীদের পরিবারের সদস্যরা মিলে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি খালি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করছিল। আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে হিরু ও হানিফ মিলে আমার তলপেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। তারা ১০-১২ জন সবাই মিলে আমাকে জনসম্মুখে দোকানের খুঁটির সাথে বেঁধে প্রথমে হেনস্তা করেন। পরে তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত, চর-থাপ্পর ও কিল-ঘুষি দিয়ে গুরুতর আহত করে।

চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমার মাথায় ও দু'চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছি। চোখে আমি ভালোভাবে দেখছি না। পাশাপাশি মাথায়ও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে। আজকে (সোমবার) সকালে মাথার সিটি স্ক্যান ও চোখের পরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মাথা ও চোখের সমস্যা গুরুতর। ভাগ্য খারাপ হলে চোখ নষ্ট ও ব্রেনেরও সমস্যা হতে পারে। যারা আমাকে আঘাত করে আমার পরিবারের সদস্যদের এতিম করতে চেয়েছে, তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত মুসলিম উদ্দিন হিরু তার নিজস্ব ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে ভাইরাল হওয়া ভিডিও'র ব্যাখা দিয়ে বলেন, শিক্ষক আবদুর রহমানের সর্বমোট ১২ জন ভাই-বোন। তারা আমাদের নিকট কিছু জায়গা বিক্রি করেছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যে আমাদের রেজিস্ট্রি দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষক আবদুর রহমান ওই জায়গায় তার অংশটুকু বিক্রি করেননি। তবে তিনি তার মূল জায়গা থেকে কয়েকগুণ বেশি দখল করে রেখেছেন।

তিনি আরও লিখেন, এ বিষয়ে তাকে ১০ থেকে ১৫ বার বলেছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি কানে নেননি। ঘটনার দিন তিনি দোকানে এসেছিলেন তখন এ বিষয়ে আমার বাবা তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমার বাবাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। আমার বাবা আঘাত পাওয়ার পরে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখি। পরে তার সাথে আমাদের হাতাহাতি হয়। তবে, মারধরের বিষয়টি ফেসবুকে উল্লেখ করেনি।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সাতকানিয়ার ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, জায়গায় বিরোধ থাকলে সেটা আইনগতভাবে অথবা বৈঠক বসে সমাধান করা যেত। তবে একজন শিক্ষককে এভাবে প্রকাশ্যে গাছের খুঁটির সাথে বেঁধে মারধরের মাধ্যমে হেনস্তা করা মোটেই উচিত হয়নি। এ ঘটনা শুধু এ শিক্ষককে আঘাত নয়, পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমান ও অসম্মান করার শামিল। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি। কারণ এভাবে ঘটতে থাকলে এরকম ঘটনায় পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষককের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বাদী থানায় একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় হান্নার ও বক্কর নামে দুই এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সোমবার সকালে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram