মনীষ সরকার রানা, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গতকাল ২৩ জুন (সোমবার) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এক বছর আগে মীমাংসিত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে পুত্র হারা এক পিতাকে বার বার হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগি ব্যাক্তি এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভূক্তভোগির অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা গ্রামের হোসেন আলীর একমাত্র ছেলে মতিয়ার রহমানের সাথে একই গ্রামের পিয়ার হকের কন্যা পারভীন বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারভীন বেগম ও তার পরিবারের সাথে মতিয়ার রহমানের বিরোধ সৃষ্টি হলে মনোমালিন্য চলতে থাকে। এমতাবস্থায় গত বছরের এপ্রিল মাসে মতিয়ার রহমান শ^শুর বাড়িতে তার স্ত্রীকে আনতে গেলে পারভীন বেগমের পরিবারের লোকজন মিলে মতিয়ার রহমানকে বিয়ের দেনমোহরানা বুঝে দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার চাপ সৃষ্টি করে।
স্ত্রীকে তালাক দিতে অশ্বীকৃতি জানালে শ্বশুর পিয়ার হক ও শ্যালক রফিকুল ইসলামসহ পরিবারের লোকজন মতিয়ার রহমানের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে চরম অপমান করে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানী ঘটায়। পরে গাছের সাথে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়। এতে মতিয়ার রহমান চরমভাবে লজ্জিত হয়ে অপমান সইতে না পেরে ওই দিন রাতে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি গ্রহণ করলে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মূলহোতা পিয়ার হক ও রফিকুল ইসলাম স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে হোসেন আলীকে আপোষ-মীমাংসার প্রস্তাব দেয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার ভাইয়ারহাট নামক স্থানে রফিকুল ইসলামের নানা হবিবর রহমান ওরফে হবি ডাকাতের বাড়িতে আপোষ-মীমাংসা করা হয়।
ওই বৈঠকে লাটশালা ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সুজন মিয়া, ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি শামছুল কামার, কৃষকলীগের সভাপতি ওয়ার্ড সভাপতি বাবলু মিয়া, বাহারুল ইসলাম, নুরুল আমীন, ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি একরামুল হক, রফিকুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য ও জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতি মাইদুল ইসলামসহ ১২/১৩ জন সালিসে উপস্থিত থেকে বিষয়টি আপোষ করেন। বৈঠকে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছয় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন দেয়া হয় হোসেন আলীকে। এছাড়াও বিভিন্ন খরচ বাবদ হোসেন আলীর শ্যালক নায়েব আলীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়।
পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে প্রদত্ত ক্ষতিপূরনকে আড়াল করে বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদা প্রদানের অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম। এর আগেও রফিকুলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু কোন সুবিধা না পাওয়ায় একটার পর একটা অভিযোগ করছেন এবং হোসেন আলীকে বিপদে ফেলতে নানান ষড়যন্ত্র করছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, রফিকুল ইসলাম একজন সুবিধাবাদি যুবক। আ’লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আ’লীগ থেকে হঠাৎ জামায়াত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ভূক্তভোগি হোসেন আলী হয়রানীর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
এব্যাপারে লাটশালা ওয়ার্ডের আ’লীগের সেক্রেটারী ও ইউপি সদস্য সুজন মিয়া বলেন, মতিয়ার রহমানের আত্মহত্যার বিষয়টি ঘটনাস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে ভাইয়ারহাটে হবি ডাকাতের বাড়িতে মীমাংসা করা হয়। সেখানে ছয় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন দেয়া হয় ছেলের বাবাকে।
লাটশালা ওয়ার্ডের জামায়াতের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম বলেন, রফিকুল একজন বিতর্কিত যুবক। আ’লীগ সরকারের আমলে ছিলেন আ’লীগের সদস্য। এখন হয়েছেন জামায়াত নেতা। তাই ক্ষতিপূরন দিয়ে এখন চাঁদা প্রদানের অভিযোগ করছেন।
মোবাইল ফোনে কথা বলা হয় রফিকুল ইসলামের সাথে। সালিস বৈইঠকে তিনি চাঁদা দিয়েছেন, না ক্ষতিপূরন দিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে না বলে এড়িয়ে যান। ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন একটি আত্মহত্যার বিষয় সালিস বৈঠকে মীমাংসা হয়েছে শুনেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।