সঞ্জীব সরকার, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষকেরা এখন রোপা-আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগাম বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবছর চাষাবাদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ আর কৃষকের কর্মব্যস্ততা।
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য রোপা-আমন ধান, যা উল্লাপাড়ার কৃষি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমন মৌসুমে এই ধান রোপণের মাধ্যমে কৃষকরা একদিকে সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, অন্যদিকে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে সক্ষম হন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রায় ১১,৫১০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের বীজ এবং প্রযুক্তিগত পরামর্শ প্রদান করছে।
কয়ড়া রতনদিয়ার কৃষক আশরাফ আলী জানান, গত বছর বন্যার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। তবে এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনের ভালো সম্ভাবনা আছে। ইতোমধ্যে রোপণ শুরু করেছি। দিন-রাত পরিশ্রম করেও মনটা ভালো লাগছে, কারণ ফসল ভালো হলে ঘরের চালে ধান উঠবে। মেয়ের স্কুলের খরচ চালাতে এই চাষে অনেক ভরসা। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও ভালোভাবে চাষ করতে পারতাম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, উন্নত জাতের বীজ ও সার সরবরাহ করছি এবং পোকামাকড় দমনের পরামর্শ দিচ্ছি। রোপা-আমন মৌসুমে কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি যাতে তারা ভালো ফলন পান। তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ২১শত কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
তবে সব কৃষকই সমানভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। কিছু এলাকায় সেচ সুবিধার অভাব, লো সেচ পাম্পের সংকট এবং শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢল কিংবা অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্নাঞ্চলের জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত সমাধান না হলে কৃষকদের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোপা-আমন ধান চাষ শুধু খাদ্য উৎপাদনের জন্য নয়, বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষক পরিবারের জীবিকায়নেও সরাসরি ভূমিকা রাখে। উল্লাপাড়ার মাঠজুড়ে এখন যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে, তা শুধু কৃষকের ঘামের প্রতিফলন নয়—এটি আগামী দিনের খাদ্য নিরাপত্তারও প্রতিচ্ছবি। সরকারি সহায়তা এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সমন্বয়ে এ অঞ্চলের কৃষি আরও সমৃদ্ধ হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।