সাজ্জাদুল তুহিন, মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজার এলাকায় আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সেগুলোর সিংহভাগই গৃহস্থালি, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও হাটের পচনশীল বর্জ্য পদার্থ ও পলিথিন ব্যাগ। এতে দুর্গন্ধে বাসাবাড়িতে থাকাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
জানা গেছে, উপজেলা সদর বলতে আত্রাই নদীর পাড়ে গড়ে উঠা প্রসাদপুর বাজারকে বুঝায়। প্রসাদপুর বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে উপজেলা সদর। দিন যত যাচ্ছে বসবাসের জন্য মানুষ ততই বাজারমুখী হচ্ছেন। উন্নয়ন জীবন শিক্ষা ব্যবস্থা নানামুখী সুবিধার কারণে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে প্রসাদপুর বাজারে বসতবাড়ি গড়ে তুলছে অথবা ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। ছোট্ট এই মফস্বল বাজারের পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বেশির ভাগ ময়লা গৃহস্থালি, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও হাটের পচনশীল বর্জ্য পদার্থ ও পলিথিন ব্যাগবাজারের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে-পেছনে, বাজারসংলগ্ন জায়গায়, নদীর পাড়ে, মসজিদ, মন্দির এমনকি লোকজনের বাসাবাড়ির সামনেও দিনের পর দিন সেসব বর্জ্য পড়ে থাকে। কোনো কোনো বাড়ির সামনে বর্জ্যের স্তূপ পড়ে আছে কয়েক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে। উৎকট দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আছে। মশা-মাছিসহ নানা রকমের পোকামাকড়ের অবাধ বংশবিস্তার চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্গন্ধময় পচা আবর্জনায় ভরা রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে তাদের বমি আসে, মাথা ঘোরায়। এমনকি আবর্জনার দুর্গন্ধে বাসাবাড়িতে থাকাও তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে আরো তীব্র হয় দুর্গন্ধ।
আরও জানা গেছে, মান্দা বৃহত্তম এই উপজেলাতে কোনো পৌরসভা নেই। প্রসাদপুর বাজারে পৌরসভা না থাকার কারণে বাসাবাড়ি, হাট বাজারের ময়লা আবর্জনা নেওয়ার কোনো গাড়ির ব্যবস্থা নেই। তাই যে যেখানে পারে ইচ্ছামত ময়লা ফেলে আবর্জনার স্তুপ তৈরি করে রেখেছে। এদিকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে নতুন নতুন বর্জা। ইতিমধ্যে জমে ওঠা বর্জ্যের স্তূপের আকার আরও বড় হচ্ছে; আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে বাজারের পরিবেশ। উৎকট দুর্গন্ধের তাৎক্ষণিক দুর্ভোগের পাশাপাশি এই দূষিত পরিবেশ সেখানকার শিশুসহ সব বয়সী মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, তা আরও গুরুতর বিষয়।
শুধু প্রসাদপুর বাজার নয়, সারা দেশের ছোট-বড় অধিকাংশ পৌর শহর অথবা বাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কম-বেশি একই রকমের। যেসব শহরের পৌরসভা নেই সেসব স্থানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাসাবাড়ি, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট কোন স্থানে ফেলতে হবে। এমনটাই দাবি করছে সচেতন এলাকাবাসী।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু রাজধানী ও বড় শহরগুলোর সমস্যা নয়। মফস্বলের ছোট শহরগুলোর জন্যও এক বিরাট সমস্যা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের পথ খোঁজা।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহ আলম মিয়া জানান, পৌরসভা না থাকার জন্য সরকারি ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রসাদপুর বাজারের বাসা বাড়ি ও হাটের ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য কয়েকটি জায়গা দেখা হয়েছে। ময়লা আবর্জনা ফেলার মতন জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেলে, বাসাবাড়ি ও হাট বাজার থেকে কীভাবে তা সংগ্রহ করে নির্ধারিত স্থানে ফেলা হবে। এ বিষয়ে প্রসাদপুর বাজার বণিক সমিতি ও স্থানীয়দের নিয়ে আলোচনা করা হবে।