এম.পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: সাগরের সৃষ্টি লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তির’ প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে পৌর শহরসহ ২০ গ্রাম, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্লাবিত হয়ে জনজীবনে বিপর্যন্ত নেমে এসেছে। গত ২ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে দু’বার ভাসছে পৌরবাসী। ১১০ হেক্টর আউশ বীজতলা ক্ষতির আশংকায় কৃষকেরা। স্থানীয়দের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ ও শহর রক্ষাবাঁধের।
বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সরেজমিনে খোঁজ খবর নেন জেলা বিএনপির সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপনসহ উপজেলার আহবায়ক মো. শহিদুল হক বাবুল, পৌর বিএনপির সভাপতি শিকদার ফরিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন। এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত ১৭ বছরে ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময়ে উন্নয়নের নামে এ পৌরসভায় হয়েছে লুটপাট। পৌরবাসী নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শহর রক্ষার জন্য বাঁধের দাবি জানান স্থানীয় পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাগরে সৃষ্টি লঘুচাপের প্রভাবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের টানা বর্ষণ ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে পৌরশহরসহ পানগুছি নদীর তীরবর্তী গাবতলা, কাঠালতলা, খাউলিয়া, সন্ন্যাসী, মধ্য বরিশাল, ফাসিয়াতলা, বারইখালীর কাস্মির, তুলাতলা, উত্তর সুতালড়ী, বহরবুনিয়া, ফুলতাহা, ঘষিয়াখালী, শ্রেনীখালী, সোনাখালী, পঞ্চকরন, দেবরাজ, সানকিভাঙ্গা, পাঠামারাসহ নিম্নঅঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় দুপুরে শত শত পরিবারের রান্না খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের ড্রেনগুলো পয়ঃনিষ্কাশন না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাজার, কাপুড়িয়া পট্টি সড়ক, কলেজ রোড, কেজি স্কুল সড়ক, কৃষি ব্যাংক সড়ক, নব্বইরশী বাসষ্ট্রান্ড, মেইন সড়কগুলোতে ৫/৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি দোকানে পানি প্রবেশ করে ক্রয় বিক্রয় বন্ধ রয়েছে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাশ রুমে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান ব্যহত। দূরপাল্লার নৌ চলাচল যাত্রিবাহী গাড়িও বন্ধ হয়ে যায়।
পৌর শহরের বাসিন্দা মশিউর রহমান মাসুম, আসাদুজ্জামান মিলন, নির্মল সাহা, হায়দার শেখ, ব্যবসায়ী পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, পূর্নিমার জোয়ার এলেই এভাবে গত ১০/১৫ বছর পৌরসভায় দিনে দু’বার পানিতে তলিয়ে যায়। ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়িতে লোকজনের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ৫/৭ টি ড্রেন থাকলেও তা নিয়মিত পৌর কর্তৃপক্ষ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করছে না। আমাদের এ দুর্ভোগ আর কতকাল পোহাতে হবে।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে নদীর তীরবর্তী নিম্নঅঞ্চল প্লাবিত হলেও ফসলী জমির মাঠে এখন ফসল নেই। তবে, ১১০ হেক্টর আউশ বীজতলায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ীভাবে থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন, জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে পৌর শহরের যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, তিনি সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। কয়েকটি পয়েন্টে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। নতুন করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও উচু করে রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে।