অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: দেশি গরু-মহিষের জন্য খ্যাত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম হাট কালাইয়া বাজারে জমে উঠেছে কোরবানির হাট। খামারিদের গরু ছাড়াও উন্মূক্ত চরে এবং স্থানীয়ভাবে গৃহস্থদের হাতে প্রাকৃতিকভাবে লালন-পালন করা হাজার হাজার গরু ও মহিষ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বাজারটিতে আমদানি করা হয় বলে দেশব্যাপী বাজারটির সুনাম রয়েছে। যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সোমবার হাটের দিন বেপারীরা ট্রাক, ট্রলার ও কার্গো নিয়ে এই হাটে হাজির হন গরু-মহিষ ক্রয়ের জন্য। কালাইয়া বাজারের গরু হাটের কারণেই চলতি বছরে (১৪৩২ বঙ্গাব্দ) বাজারটির ইজারামূল্য প্রায় চার কোটি টাকা উঠেছে। যা দক্ষিণাঞ্চলে গ্রামীণ হাট-বাজার ইজারায় সর্বোচ্চ।
সোমবার সরেজমিন কালাইয়া গরু-মহিষের হাট ঘুরে দেখা গেছে, উপকূলীয় জেলা ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল অঞ্চল থেকে প্রান্তিক কৃষক, খামারি ও ব্যবসায়ীররা হাটে গরু-মহিষ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। এসব গরু-মহিষ কিনতে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফরিদপুর, দিনাজরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় পাইকাররা এসেছেন। বাজারে বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুই বেশি কেনা-বেচা হচ্ছে।
দেখা গেছে, ছোট গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার, মাঝারি গরু ১ লাখ ১০ হাজার এবং বড় গরু দেড় থেকে থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ক্রেতার চেয়ে বাজারে দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারাই বেশি। হাটে গরুর সরবারহ বেশি থাকায় দাম অনেকটা কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
ভোলার মুজিব নগর এলাকার গরু ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার ফরাজি ১২টি গরু বিক্রি করতে এনেছেন। তার হিসেবে গরুর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কম। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গরু ব্যবসায়ী মো. সোহরাব বয়াতি বলেন, বাজারে গরুর চাপ (আমদানি) বেশি। তাই দাম কম। দুর থেকে হাটে গরু নিয়ে আসায় বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। নোয়াখালী থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, কালাইয়া একটি বড় হাট। এখানে দেশী গরু-মহিষের বেশি সরবরাহ থাকে। যেকারণে আমি এ হাটে আসি। এ পর্যন্ত ৪০টি গরু কিনেছি।
চাঁদপুরের ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, এই হাটে প্রাকৃতিকভাবে লালন পালন করা মহিষ পাওয়া যায়। এসব মহিষ চরাঞ্চলে উন্মুক্তভাবে লালন পালন করায় মাংস সুস্বাদ হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখানকার মহিষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা এখানে মহিষ কিনতে এসেছি। এভাবেই প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ঐতিহ্যবাহী কালাইয়ার গরু-মহিষের হাট জমে উঠেছে। এই হাটকে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা চলছে।
কালাইয়া গবাদি পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. আতাহর সিকদার জানান, রবিবার রাত থেকে গরু-মহিষ আসতে শুরু করে। সোমবার হাটের দিনের পরেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাট কমিটির পাশাপাশি নৌ পুলিশ সদস্যরাও টহলে রয়েছেন।