গংগাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি: তিস্তা পাড়ের মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রধান মৌলিক অধিকার থেকেও একতরফা বঞ্চিত নদী পাড়ের এই অসহায় মানুষগুলো। চিকিৎসার অধিকার পাওয়ার শেষ আশাটুকু যখন ফিকে হয়ে যায় তখনই জীবন বাঁচাতে তেলবিহীন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পথ চলার শুরু হয় তাদের। নদীর চরগুলোতে লক্ষ লক্ষ লোকের বসবাস হলেও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক এর সংখ্যা অতি নগণ্য।
হঠাৎ নদী পাড়ের মানুষগুলো খুব অসুস্থ হলে চলাচলের রাস্তা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা যায় না। মুমূর্ষু রোগী পরিবহনে তখন সাজাতে হয় তেলবিহীন অ্যাম্বুলেন্স। কখনো চেয়ার দিয়ে, কখনো জলচৌকি বা লাশবাহী খাটলি দিয়ে সাজানো হয় এই তেলবিহীন অ্যাম্বুলেন্স। তারপর দু'পাশে দড়ি বেঁধে রোগীকে বসিয়ে বা শুইয়ে (পালকির মতো) কাঁধে নিয়ে বালুর উপর দিয়ে হাঁটতে হয় শুকনো দীর্ঘরাস্তা।
দীর্ঘ পথ হাঁটার পর নৌকায় উঠিয়ে আবার পাড়ি দিতে হয় নদীপথ। এপারের ঘাটে এলেই তবে দেখা মেলে যন্ত্রবাহনের। এরপর সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারদের শরণাপন্ন হন মুমূর্ষু রোগীরা। এক্ষেত্রে পথ শেষ না হতেই কখনো কখনো শেষ হয়ে যায় অনেকের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। আশায় বুক বাঁধা হবু পিতা হারায় অনাগত সন্তান কিংবা প্রিয়তমা স্ত্রী কে হারিয়ে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় অনেক সহজ-সরল পুরুষ। তবুও মানুষগুলোকে বেঁচে থাকতেই হয় চলতে হয় বলে।
দীর্ঘদিন পর অনেকটা আশার সঞ্চার হয়েছিল অসহায় নদী পাড়ের মানুষগুলোর মনে প্রাণে। গত ১৩-ই এপ্রিল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের কথায়। বলেছিলেন "হাসপাতালটি তিস্তা প্রকল্প এলাকায় নির্মিত হবে" মানুষগুলোও ভেবে নিয়েছিল এবার বুঝি হাসপাতাল হবেই।
তারই সূত্র ধরে মঙ্গলবার (১৫ ই এপ্রিল) তিস্তা নদীর তীরবর্তী গংগাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের মহিপুর মৌজার চর কলাগাছি এলাকায় প্রস্তাবিত স্থানটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অর্থনীতিবিদ(লিড ইকোনমিস্ট) শহিদুর রহমান খন্দকার, সাবেক সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট ইকোনমিস্ট ফরহাদ আহমেদ, রংপুর জেলা প্রশাসক মোঃ রবিউল ফয়সাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী সহ স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ।
প্রকল্প এলাকাটি পরিদর্শনের পর খুব পছন্দ হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন প্রতিনিধি দল। তিস্তা পাড়ের প্রতিনিধিদলের পরিদর্শন এর ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চতুর্দিকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরের দিন থেকে এর সূত্র ধরে বিভিন্ন জায়গায় চীন এর সেই হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন করতে দেখা যায়।
আক্ষেপ জানিয়ে তিস্তাপাড়ের বৃদ্ধ লাল মিয়া বলেন, আল্লাহ হামাক এমন বানাইছে, কি করি এলা-না আটি বাঁচি থাকা। হাসপাতাল কোনা হইলে হামার আজীবনের দুঃখ ঘুঁচি যাইবে। মনা একনা ওমাক কনতো, শোনবে কি?
তিস্তা উন্নয়ন ফোরাম মুখপত্র ও গংগাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আব্দুল আলীম প্রামানিক জানান, দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ শেষ হয়ে যাবে যদি চীনের পুরস্কার হাজার শয্যার হাসপাতালটি এখানে স্থাপিত হয়। মানুষের এত দুর্ভোগ আর এত কষ্ট দেখতে ইচ্ছে করে না।
তিস্তা বাঁচাও-নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান জানান, চীন বলেছে তিস্তা প্রকল্প এলাকায় হবে হাজার শয্যার এ হাসপাতাল। আর হাসপাতালটি নির্মাণ হলেই তেলবিহীন এরকম অ্যাম্বুলেন্স থেকে চিরতরে মুক্তি পাবে তিস্তাচরবাসী।