কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় মন্ডল গ্রুপের মন্ট্রিমস কারখানার শ্রমিক কর্তৃপক্ষের মানসিক নির্যাতন ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ওই ঘটনার পর থেকে কারখানার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নিহত হলো নীলফামারী এলাকার মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী (২৩)। তিনি স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বসবাস করতেন এবং ওই কারখানার কার্টুন সেকশনে কাজ করতেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে তিনি ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল খায়। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক একটি ফেসবুকে স্টাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, মন্ডল গ্রুপ মন্ট্রিমস লিমিটেড এখানে এক বছর যাবত চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হচ্ছে তাদেরকে পার্মান করে। আমাকে করেনা কারণ হচ্ছে আমরা মেশিনের লোক। একদিন ছয়টায় গিয়েছিলাম তার জন্য আমাদেরকে বিচার করছি আমি কি অপরাধ করছি। তাদের জন্য আমার জীবন আমি শেষ করে দেব। এর জন্য দাবি আমাদের সেকশনের প্ল্যানিং কামরুল স্যার আর হচ্ছে ম্যানেজার হারুন স্যার ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর আপনারা এর বিচার করবেন এই পৃথিবীর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।
নিহতের স্বজন ও কারখানা শ্রমিকরা জানান, তিনি এক বছর হল ডেইলি বেসিকে কাজ করতেন ওই কারখানায়। অনেককে পার্মানেন্ট করা হলেও তাকে করা হয়নি। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ বকাঝকা করেছেন। পরে তিনি কেমিক্যাল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রথমে তাকে সফিপুর তানহা হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা ভর্তি করেনি। গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যায়।
নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার মুঠোফোনে বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে, এখন তাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে রয়েছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
নিহতের বোন জামাই বাবু বলেন, ইদ্রিস অনেকদিন হলো মন্ট্রিমস কারখানায় কাজ করে। ওর সাথের সবাইরে চাকরিতে পার্মানেন্ট করলেও কর্তৃপক্ষ ওকে পার্মানেন্ট করেনি। অসুস্থ থাকার কারণে ৬ টায় কারখানায় হতে বের হয়। এজন্য পরের দিন ম্যানেজমেন্ট হারুন ও কামরুল তাকে রুমে বকাঝকা করে। পরে দুঃখ যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছে।
সফিপুর তানহা হাসপাতালের ম্যানেজার মোঃ মোস্তফা জানান, গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় একজন শ্রমিককে হাসপাতালটিতে আনা হয়েছিল অবস্থার বেগতিক দেখে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কারখানার এডমিন ম্যানেজার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান।
মৌচাক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোঃ সেলিম জানান, কারখানা থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে একজন শ্রমিক মারা গিয়েছে, যার কারণে কারখানাটি পরিদর্শনে এসেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।