পিন্টু দেবনাথ: স্বস্তির বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে মৌলভীবাজারের চা বাগানের চাগাছগুলোয়। টানা তাপপ্রবাহের পর গত তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পাতা গজিয়ে উঠেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রচণ্ড তাপে ঝলসে গিয়েছিল বাগানের অধিকাংশ চা গাছ। অনেক স্থানে শুরু হয়েছিল লাল রোগের প্রাদুর্ভাব। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে কমে যায় চা উৎপাদনের গতি। তবে গত কয়েক দিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে।
গতকাল বুধবারের তীব্র বৃষ্টিতে বাগান রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। ২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল। দেশে নিবন্ধনকৃত চা বাগান রয়েছে ১৬৮টি। পাশাপাশি পঞ্চগড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রায়িত অনেকগুলো চা বাগান। পঞ্চগড় ও দেশের ১৬৮টি চা বাগান মিলিয়ে ২০২৫ এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি।
প্রকৃতিনির্ভর একটি কৃষিজ পণ্য চা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্যের কিরণ। প্রায় চার মাস আগ থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোয় চা গাছ ছাঁটাই করার কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের কারণে চা বাগানে চলে এসেছিল রুক্ষ শুষ্কভাব। চা বাগানের জন্য সহনীয় তাপমাত্রার সীমা পেরিয়ে গেলে বিপত্তিতে পড়েন বাগান-সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে রুক্ষ বাগানে নতুন পাতার দেখা মিলছিল না খুব একটা। এর মাঝে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সামান্য যা কুঁড়ি-পাতা ছিল তাও আক্রান্ত হতে শুরু করে।
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টিতে বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা অনেকটাই খুশি হয়েছেন। দুয়েক দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি দেখা দিলে ভালো ফলনের সম্ভাবনার পাশাপাশি আপাতত বাগান রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেওয়া প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল জেলার ৯২টি চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। অনেক বাগানের চা পাতা পুড়ে যায়।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক একেএম রফিকুল হক জানান, বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অবশ্যই উপকারী। বিশেষভাবে নতুন চা গাছ যেগুলো আছে, তার জন্য বেশি উপকারী। তারপর প্রুনিংকৃত চা গাছগুলো দ্রুত কুঁড়ি ছাড়বে বৃষ্টি হওয়ায়।
সরেজমিন শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে দেখা যায়, অনেক স্থানে চা গাছ মরা, আবার কিছু কিছু জায়গায় নতুন কুঁড়ি গজিয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছর পাতায় সবুজ সজীবতা দেখা দিয়েছে।