ঢাকা
৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:১২
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫

দোয়ারাবাজারে সেচের পানির তীব্র সঙ্কট, কৃষকের স্বপ্ন ভাঙছে হাওরে

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ৮ হাওরে সেচের পানি তীব্র সঙ্কটে স্বপ্ন ভাঙছে কৃষকের। উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের পানাইল মৌজার বিছনাঝাই, চেঙ্গাইয়া, সোনাখালী, কোনারছিড়ি, দাইড়পাড়, ফুলনলী, বিলপাড় নাফতেরগাঁও আলমপুর হাওরে প্রায় ২শ' ৫৪ হেক্টর বোরো জমি শুকিয়ে এখন কাঠ হয়ে গেছে। পানি সরবরাহ না থাকায় সদ্য রোপণকৃত বোরো জমির মাটি ফেটে গেছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে পান্ডারখাল মরাসুরমা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় অন্তত ৮টি হাওরের কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কাজে আসছে না পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের মঙ্গলপুর বাজারের নিকটবর্তী পান্ডারখাল মরাসুরমা নদীর ওপর স্থাপিত সাহেবের গাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অধীনে সেচ প্রকল্পটিও। প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ওই সেচ প্রকল্পের পানি দিয়েই ৮ হাওরে বোরো চাষাবাদ করেন এখানকার কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে সেচ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিপনা, পানি বন্টনে একতরফা নীতি এবং নানা অনিয়ম দুর্ণীতির কারণে বোরো আবাদের ভর মৌসুমে পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হন উপকারভোগী কৃষকরা। চলতি বছরও বোরো জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। বোরো চাষিদের সেচ চিন্তা এখন এই প্রকল্পের পানি। অথচ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিতে পানি পাচ্ছে না কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, বোরো মৌসুমে পানি সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে গত বছর সাহেবের গাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০ লাখ একান্ন হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ হয়। কিন্তু দেড় বছরেও নদী খননের কাজ শুরু করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। উল্টো নদীতে পানি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির পদপদবী ধারীরা হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। এদিকে কৃষকরা ধুঁকছেন পানি সঙ্কটে। এ বিষয়ে কৃষকরা বারবার স্থানীয় এলজিইডি অফিস কর্তৃপক্ষের দারস্থ হয়ে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। সেচ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলজিইডি অফিসের লোকজনও কৃষকদের সঙ্গে করছেন হঠকারিতা।

জীবনপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেছেন, সাহেবের গাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অধীনে সেচ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা ইচ্ছে করেই কৃষকদের সঙ্গে তামাশা করে আসছে। তারা নিজের স্বার্থে শুরুতে পানি সংগ্রহ করে সঙ্কট তৈরি করে। এ ছাড়া প্রতি বছর নদী খননে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে কাজের কাজ কিছুই করে না। এলজিইডি অফিসারের যোগসাজশে খননের নামে বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকারই কাজ হয় না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নদী খননের বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজ অবধি খনন কাজ প্রসেসিংই করা হয়নি। এবার সঠিক সময়ে সেচের পানি না পাওয়ায় ফসলি জমি ফেটে যাচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক চানমিয়া জানান, সেচ প্রকল্পে পানির অসুবিধার কারণে ক্ষেতের ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। খনন না করায় যেখানে সেচ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে ওই জায়গায় এখন পানি নেই, কিন্তু একই নদী উত্তর দিকে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে সেখান থেকে পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। আর পানি সঙ্কটে চলতি বোরো মৌসুমে কয়েক শ হেক্টর বোরো ফসল বিনষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে এবার।

ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াহাব জানান, এই সময়ে সেচ প্রকল্প থাকলেও সেচের পানি নাই। অথচ বোরো মৌসুমে শুরুর পূর্বেই কয়েক শ কৃষকের কাছ থেকে পানি বন্টন বাবদ বিঘা প্রতি ৮শ' টাকা করে নিয়েছে পানি ব্যবস্থা সমবায় সমিতির সংশ্লিষ্টরা। টাকা দিয়েও এখন পানি নেই। এ কারণে এ বছর ধানই হবে না হাওরে। এ দায়ভার কারা নেবে। আমরা এখন কার কাছে যাবো। যে দিকে পানি আছে ওই দিকেও ডিজেল অথবা বিদ্যুৎ মেশিনে পানি সরবরাহ করতে দেয়না সমিতির সংশ্লিষ্টরা।

সাহেবের গাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের বলেছেন, পান্ডারখাল মরা সুরমা নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এ জন্য সঠিক সময়ে হাওরে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নদী খননে গত বছর ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে কিন্তু সময় সুযোগ এবং আমাদের সমিতির সেক্রেটারি মারা যাওয়ার কারণে তা বাস্তবায়ন করা বিলম্ব হচ্ছে। এবার প্রসেসিং করা হচ্ছে। খনন হয়ে গেলে আশা করছি পানি সঙ্কটের বিষয়টি আগামীতে সমাধান করা যাবে।

কৃষকদের এমন দুরাবস্থার দায় নিতে নারাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু। তিনি বলেছেন, সেচ প্রকল্পটি যেহেতু এলজিইডি অফিস সংশ্লিষ্ট, তো উনাদের কাছেই জানতে চাওয়া প্রয়োজন।

অন্যদিকে কৃষকদের দুরাবস্থা প্রতিকারে জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি অফিসার আব্দুল হামিদ কে মুঠোফোনে বারবার কল দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সঞ্চিত কুমার মন্ডল জানান, এই অঞ্চলে বোরো ধান যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। আমরা সাহেবের গাঁও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের সঠিক সময়ে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram