মাজহারুল ইসলাম বিপু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই' এটি শুধু স্লোগান নয় এটি তিস্তা পাড়ের মানুষের বাঁচার জন্য যে আহাজারি, তার আওয়াজ আজকে বেরিয়ে আসছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, কথায় বলেন আপনারা নিরপেক্ষ, নিরপেক্ষ এই জায়গায় থাকলে চলবে না, এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে, ভারতকে বলতে হবে, আমি আমার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই।
তিনি আজ বিকেলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিসাব ও মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা নদীর চড়ে জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে একদিকে যেমন ভারত বাঁধ ছেড়ে দেয় তখন পানির তোরে আমাদের ঘরবাড়ি আবাদি ফসল ধানের ক্ষেত সব ভেসে যায়। আমাদের বন্ধ করে দেয় তখন আমাদের সমস্ত এলাকা খরায় শুকিয়ে শেষ হয়ে যায়। তিস্তা পারের মানুষের দুঃখ আর যায় না। আজ থেকে পনের বছর আগের থেকে আমরা তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিসেবে দাবি জানাচ্ছি।
তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসলো প্রথম দিকে সবাই ভাবল ভারতের বন্ধু আওয়ামী লীগ সুতরাং পানি এবার পেয়ে যাবে কিন্তু ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেঁচে দিয়েছে তিস্তায় এক ফোঁটা পানিও আনতে পারে নাই। শুধু তিস্তায় নয় ৫৪টি নদী রয়েছে ভারত থেকে আমাদের দেশে এসেছে। সব নদীর উজানে তারা বাঁধ দিয়ে ফেলেছে। তারা বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ধান ফলাতে পারেনা, ফসল ফলাতে পারে না, তারা তাদের জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। জেলেরা নদীতে মারতে পারে না, প্রত্যেকটা মানুষকে কি কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। সকলের লড়াইয়ের মাধ্যমে পালিয়েছে ভারতে। একদিকে পানি দেয় না অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে। আর ওখান থেকে বিভিন্ন ধরনের হুকুমদারি করে। আজকের এই সংগ্রাম বাঁচা মরার সংগ্রাম, এই এলাকার মানুষের এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দেব না।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, কথায় বলেন আপনারা নিরপেক্ষ, নিরপেক্ষ এই জায়গায় থাকলে চলবে না, এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে, ভারতকে বলতে হবে, আমি আমার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আপনি যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাই তাড়াতাড়ি নির্বাচনটি দিয়ে দিন। জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। ভারতকে পরিষ্কার করে বলছি, আগেও বলেছি এখনও বলছি, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের উপর দাঁড়াতে চাই।
তিনি পরিশেষে বলেন, তারেক রহমান আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আজ তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছেন। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা লক্ষ্যে। নির্বাচন দিলে দেশে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেই অশান্তি হবে না।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু, লালমনিরহাট জেলা বিএনপি'র সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল হাবিব দুলু সহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমাপনী কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই, তিস্তা নদীর রক্ষা আন্দোলনের শীর্ষক কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা সহ পাঁচটি জেলার তিস্তা পারের ১৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১১টি পয়েন্টে জনতার সমাবেশ ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু হয়েছে।