ইয়াকুব আলী, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: কুমড়ো বড়ির কদর বেড়েছে। তরকারির মধ্যে প্রিয় একটি খাবারের নাম কুমড়ো বড়ি। স্বাদে অতুলনীয় এই খাবার শীত মৌসুম এলেই গ্রামীণ বাংলার নারীরা তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। শীত এলেই গ্রামে গ্রামে (কুমড়ো-কলাই দিয়ে তৈরি) বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। যশোরের চৌগাছা অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে কুমড়ো বড়ি এখন সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শুধু বাড়িতে খাওয়ার জন্যই নয়; এর বিপণনও হচ্ছে সারাদেশে। যারা ইতিপূর্বে এর নাম শোনেননি, তারাও এখন নিতে পারছেন এর স্বাদ।
সারা বছরই বাজারে বিভিন্ন ধরনের কুমড়ো বড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু এ অঞ্চলে সাধারণত চালকুমড়োর সঙ্গে মাষকলাই (কালো টিকরি কলাই) ডাল মিশিয়ে তৈরি বড়িই স্থানীয়দের বেশি প্রিয়। মাছের ঝোল বা সবজির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয় উপাদেয় এই খাবারটি। বহু বছর ধরেই গ্রামগঞ্জের নারীরা বাড়িতে খাওয়ার জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি ও সংরক্ষণ করতেন। এই ঐতিহ্য খাবার এখন অনলাইনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন উদ্যোক্তরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও শীত মৌসুসে গ্রামে গ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়ে গেছে। আগে শুধু বাড়িতে খাওয়া এবং আত্মীয় স্বজনদের দেয়ার জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করতেন নারীরা। এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্যও প্রচুর পরিমাণে কুমড়ো বড়ি তৈরি হচ্ছে।
বড়ি তৈরির পদ্ধতি জানতে গিয়ে কথা হয় পৌরসভার ফাতেমা খাতুনের সাথে। তার বাড়ি ৪নং ওয়ার্ডের উপজেলা পরিষদ পূর্বপাড়ায়। তিনি বললেন, বড়ি দেওয়ার আগের দিন খোসা ছাড়ানো মাষকলাই ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর সন্ধ্যায় পাকা চালকুমড়োর খোসা ছাড়িয়ে ভেত রের নরম অংশ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হয়। এরপর কুুমড়ো কুরে পানি ঝড়িয়ে নিতে মিহি করে নরম কুমড়ো পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পরদিন ভোরে ডালের পানি ছেঁকে মিহি করে বেটে বা ঢেকিতে পাড়িয়ে(অবশ্য এখন মেশিনের সাহাষ্যে মন্ড তৈরি হয়) মন্ড তৈরি করতে হয়। পানি ঝড়ানো কুমড়োর সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও পরিমাণ মতো লবণ মেশাতে হয়। পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হয়। এরপর কয়েক দফায় কড়া রোদে শুকিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যায় কুমড়ো বড়ি। প্রতিবছর শীত এলেই চালকুমড়ো ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করেন। বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় ভরে অনেক দিন রাখা যায়। তরকারিতে এ বড়ি দিলে খাবার খুব সুস্বাদু হয়।
উপজেলার পেটভরা গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন জানালেন, কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ডাল ও কুমড়ো ভাল ভাবে ফেনাতে (একসাথে মিশানো) হয়। তারপর রোদে ভালভাবে শুকাতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া ঠিকমত সম্পন্ন না হলে বড়ির স্বাদ ভালো হয় না। এবার ঐতিহ্যের খাবার কুমড়ো বড়ি’র বাণিজ্যিক কদরও বাড়ছে। বিশেষ করে অনলাইন পেজ বা প্লাটফর্ম গুলোতেও বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে কুমড়ো বড়িও বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের শিক্ষিত নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বিক্রি করছেন।
উপজেলার নুরবানু, খালেদা খাতুন, নুরজাহান, পারভিনা বেগম ও রিক্তা জানায়, আমরা এ বছর কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি।