ঢাকা
১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৩০
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হাতিয়ার কৃষি কর্মকর্তা সবুজ

ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া(নোয়াখালী): নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজের বিরুদ্ধে সরকারি কৃষি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হাতিয়ায় যোগদানের পর থেকে তিনি তার অফিসের পছন্দসই ব্যক্তি ও অধিকাংশ কৃষি উপ-সহকারীদের সহযোগিতায় পুরো কৃষিখাতকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করে ফেলেছেন। ট্রাক্টরসহ কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোকদের দিয়ে টাকা নিয়ে অ-কৃষকদের মাঝে বন্টনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কৃষি প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে অধিকাংশ অ কৃষকদের এনে সামান্য নাস্তা ও অল্প কয়টা টাকা ধরিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করে দেয়। কাগজপত্রে সংখ্যা ঠিক রেখে এবং ব্যাচ প্রতি ৭-৮ জন প্রশিক্ষণার্থী কম রেখে এই টাকাগুলো নিজ পকেট ভরে নিতেন।

কৃষি অফিস সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভর্তুকিকৃত কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দ ও মাঠ দিবসসহ প্রভৃতি খাতের বরাদ্দের বেশিরভাগ লুটপাট হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অপকৌশলে লোক দেখানো ব্যানার টাঙিয়ে ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানের ছবি তুলেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্ট্রারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই। এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে প্রথমে তথ্য অধিকার আইনে এবং পরে ম্যানুয়ালি তথ্য চাওয়া হয় কৃষি অফিস থেকে। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও তার দপ্তর এক মাস ধরে নানান টালবাহানারপরও কৃষি বরাদ্দের কোনো তথ্য সরবরাহ করেননি প্রতিবেদক'কে।

পরে বিভিন্ন অভিযোগের সূত্র ধরে এই প্রতিবেদক হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সঙ্গে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানে মাঠে নামেন। এতে বেরিয়ে আসে কৃষকদের জন্য সরকারি বরাদ্দের অর্ধেকই চলে যায় কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজের পকেটে। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রিতেও তার যোগসাজশ রয়েছে।

উপজেলার আফাজিয়া এলাকার ফকির মিয়াসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরকিং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড পশ্চিম গামছাখালী গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে শামসুদ্দিন এবং চরঈশ্বর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাহমুদুল হকের ছেলে জয়নাল- উভয়ই সার ও কীটনাশক বিক্রেতা। এরা কেউ কৃষক নন, তবুও কৃষি অফিস'কে ঘুষ দিয়ে ধান লওয়ার দু'টি মেশিন পায়। পরে দু'টি মেশিন তারা আবার বিক্রিও করে দেয়। চরকিং ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামের নামমাত্র কৃষক রাজ বিহারি কৃষি অফিসের সঙ্গে সংযোগ রেখে গত বছর কৃষি ভর্তুকির একটি ট্রাক্টর পান, এবং পরে তা বেশি দামে বিক্রিও করে দেন। এ বিষয়ে বিহারি বাবু বলেন, ট্রাক্টর কাজে লাগে না বলে তিনি তা বিক্রি করে দেন। কৃষি ভর্তুকির আওতায় গত বছরের শুরুর দিকে ট্রাক্টর পান পশ্চিম সোনাদিয়ার বাসিন্দা আমির হোসেন সাজু। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি সরাসরি কৃষিকাজে জড়িত নন। আমির পরে  ট্রাক্টরটি বিক্রি করে দেন।

কৃষি ভর্তুকির যন্ত্র নিয়ে লুটপাটের কথা উল্লেখ করে চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ জানান, কৃষি অফিস যে যার ইচ্ছামতো চালায়। লাইসেন্স বিহীন ইউরিয়া সার বিক্রেতাদের নানান অনিয়মে সাপোর্ট দেয় কৃষি অফিস। সরকারি কৃষি ভর্তুকি ও প্রণোদনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকৃষকেরা পাচ্ছে। যার চাষ নেই সেও দু-তিনবার ট্রাক্টর পায়, প্রকৃত কৃষক এই সুবিধা পায় না।

তমরোদ্দি ইউনিয়নের উত্তর বেজুগালিয়া গ্রামের ইসলাম মিয়া জানান, একই ইউনিয়নের দাসের হাট বাজারের পার্শ্ববর্তী জাবেদ নামমাত্র কৃষক। অথচ কৃষি অফিসের সঙ্গে ঘুষ বিনিময়ের মাধ্যমে গত তিনমাস আগে একটি ট্রাক্টর পেয়ে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) তিনি  কৃষি ভর্তুকির এই ট্রাক্টরটি বিক্রি করে দেন। পাম্প মেশিন থেকে শুরু করে সবরকমের কৃষি উপকরণ পায় এই জাবেদ। সোনাদিয়া ইউনিয়নের চৌরাস্তা বাজারের সার ডিলার আনোয়ার হোসেন দুলাল এ বছরের অক্টোবর মাসে আবুল কালাম নামের স্থানীয় এক কৃষকের কাছে বাড়তি দামে ইউরিয়া সার বিক্রি করে এবং সঙ্গে কীটনাশক কিনতে বাধ্য করেন। পরে ভুক্তভোগী উপজেলা কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা কৃষি অফিস তদন্তে সত্যতা পেলেও কোন ব্যবস্থা নেননি। 

একই ইউনিয়নের মাইজদী বাজারের সার ও কীটনাশক বিক্রেতা আকবর হোসেন জানান, ইউরিয়া সার বিক্রয়ে কৃষি অফিস কোনো নির্দেশনা দিচ্ছে না। সাব ডিলার'রা ইচ্ছামতো সার বিক্রি করে। তার এলাকার কৃষি উপসহকারী দাউদ কীটনাশক লাইসেন্স নবায়নে অফিস খরচের কথা বলে তার থেকে ২ হাজার  পাঁচশ' টাকা নিয়েছে বলেও জানান তিনি। চৌমুহনী বাজারের সার এবং হোলসেলার কীটনাশক বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম জানান, আশ-পাশের বাজার গুলোতে বিনা লাইসেন্সে ব্যাপক হারে ইউরিয়া সার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে কৃষি অফিস। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজকে অভিযোগ দিলে তিনি ঘুরিয়ে পেছিয়ে উত্তর দেন। সিরাজুল ইসলাম আরো জানান, তার কীটনাশক লাইসেন্স নবায়ন করতে অফিস চার হাজার টাকা নেয়। জানা গেছে, খুচরা কীটনাশক লাইসেন্স নবায়নে সরকারি খরচ মাত্র তিনশ' টাকা আর হোলসেল লাইসেন্স মাত্র এক হাজার টাকা। কৃষি অফিসের তথ্য অনুসারে, হাতিয়াতে প্রায় ৫০০ এর অধিক খুচরা ও হোলসেল কীটনাশকের লাইসেন্স রয়েছে।

সাগুরিয়া বাজারের সার ও কীটনাশক বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম জানান, তাদের বুড়িরচর ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী রুবেল নিজেই কীটনাশকের ব্যবসা করে। তিনি প্রভাব খাটিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের নানান ধাঁচের কীটনাশক কিনতে বাধ্য করেন। কীটনাশক লাইসেন্স নবায়নে অফিস খরচের কথা বলে ২ হাজার পাঁচশ' টাকা নেয়। গত বর্ষায় এই এলাকায় ১০ জন কৃষকের মাঝে সরকারি ধান বীজ বিক্রি করে। ধান বীজের চারা না গজায় ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব কৃষকদের ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন।

এ ছাড়া পৌরসভা ১নং ওয়ার্ড চরকৈলাশ গ্রামের প্রকৃত কৃষি কার্ডধারী ওছমান গণি ও বাকের হোসেন, ৯নং ওয়ার্ড রেহানিয়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা বেগম, ৭নং ওয়ার্ড শুন্যেরচর গ্রামের ইউছুফ জানান, কখনো তারা কৃষি অফিসের কোনো সহযোগিতা পায়নি। একই রকম অভিযোগ জানিয়েছেন, হরনী ইউনিয়নের চর গাসিয়া এলাকার মোশাররফ হোসেন, রবিয়ল, জসিম সর্দার এবং সুখচর ইউনিয়নের ঢালচর এলাকার আলাউদ্দিন ও কামাল। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ লাইসেন্স বিহীন কিছু ব্যবসায়ীকে ইউরিয়া সার বিক্রয়ের অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে অন্য দুর্নীতির অভিযোগ ইনিয়ে-বিনিয়ে এড়িয়ে যান।

এবিষয়ে নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস মোবাইল ফোনে জানান, অভিযোগ সমূহ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram