শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা সুন্দরবন উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলায়। গত চার মাসে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শত মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
এরমধ্যে উপজেলার তাফালবাড়ি স্কুল এ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণি থেকেই ২২ জন ছাত্রী ও দুই ছাত্রের বাল্যবিবাহ হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ ছাত্রী সহ উপজেলার রাজাপুর, আমড়াগাছিয়া, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা এলাকার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসা থেকে এসব বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া গেছে। অনুষ্ঠিত বিবাহের অধিকাংশই পরিবারে ইচ্ছের বিরুদ্ধে গোপনে সংগঠিত হয়েছে। তবে কিছু বিবাহ পরিবারের সম্মতিতেও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাল্যবিবাহ লাগামহীন হওয়ায় একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে দেখা দিয়েছে যেমন বিশৃঙ্খলা অপরদিকে বাড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবক, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের।
উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের অভিবাবক মোঃ হাসানুজ্জামান পলাশ, জাকির হোসেন আকন, ওবায়দুল শেখ জানান, বাল্যবিবাহ লাগামহীন হওয়ায় অভিবাবকদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তারা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ ও তাফালবাড়ি স্কুল এ্যান্ড কলেজের সহ প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান জানান, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বাহিরে প্রাইভেট টিউটরদের কাছে দিনে-রাতে পড়তে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা একে অপরের প্রতি মানসিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে এবং অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেও তারা তাদের সর্বনাশ ডেকে আনছে।
শিক্ষকবৃন্দ আরও জানান, বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয় প্রতিষ্ঠান থেকে। এ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবকদের অধিক সচেতন হতে হবে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করেন উন্নয়ন সংস্থা উদয়ন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শেখ আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি জানান, সুন্দরবন উপকূলীয় শরণখোলায় সামাজিক সচেতনতার অভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুদীপ্ত কুমার সিংহ জানান, বাল্যবিবাহ নিরসনকল্পে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে এ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। সমাজের সর্ব শ্রেণির মানুষকেও শিশু বিবাহ প্রতিরোধের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।