ঢাকা
২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৪:০২
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫

আদালতে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ডিএমপি

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আদালতে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিচার কার্যক্রম দ্রুত হবে, কর্মঘণ্টা ও রাষ্ট্রীয় ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং মামলাজট কমবে বলে মনে করছে পুলিশ ও আইনজীবীরা। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে ডিএমপি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে প্রতিদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যদের নামে অন্তত ৯শ সমন আসে। কিন্তু অসুস্থতাজনিত কারণ, দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং মামলা তদন্তসহ নানা পুলিশিং কাজে ব্যস্ততার কারণে অন্তত ২শ পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিতে যান। বাকিরা সাক্ষ্য দিতে পারেন না। ফলে পুলিশ সাক্ষীর কারণে কোনো কোনো মামলার বিচার কাজ আটকে থাকে। আবার ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা শহরের আদালতে সাক্ষ্য দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে আবার ডিএমপিতে কাজে যোগ দিতে দুই তিন দিন লেগে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিও লাগে। এ ছাড়া একজন পুলিশ সদস্য আদালতে সশরীরে উপস্থিত থেকে সাক্ষ্য দিতে গেলে দূরত্ব ভেদে তাকে ভাতা প্রদান করতে হয়। এ ছাড়া জ্বালানি খরচ হয়। কিন্তু ভার্চুয়ালি কোনো পুলিশ সদস্য ঢাকার বাইরের কোনো জেলা আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করলে তাকে আর ওই জেলায় যাওয়া-আসার ঝক্কি নিতে হচ্ছে না। তা ছাড়া কর্মঘণ্টা কমছে। বিচার কাজও দ্রুত হচ্ছে।

২০২০ সালে দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর আদালতে সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াই অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আসামিদের জামিন শুনানি ও মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। এতে তখন বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম হয়। কিন্তু করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর একটা পর্যায়ে ভার্চুয়ালি বিচার কার্যক্রম থমকে যায়। বর্তমানে মাঝেমধ্যে কারাবন্দি গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের হাজিরা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ মামলার যেসব আসামির নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে।

অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ, তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি সংক্রান্ত অনুসরণীয় বিষয়ে গত ১৪ মে সুপ্রিমকোর্টের বিচার শাখা ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারি করে। এই নির্দেশনার আলোকে যে কোনো আদালত ভার্চুয়ালি মামলার হাজিরা, জামিন শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারবে। ওই নির্দেশনায় কীভাবে অনলাইনে সাক্ষ্য নিতে হবে তার বিস্তারিত গাইডলাইনও করে দেয়।

সুপ্রিমকোর্টের ‘প্রাকটিস নির্দেশনা’র আলোকে ভার্চুয়ালি পুলিশ সাক্ষীদের যেন বিভিন্ন আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ নিজেদের পূর্বপ্রস্তুতিও শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রশাসন (অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. সরওয়ার গত ১১ সেপ্টেম্বর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে অধীনস্থদের নিয়ে সভা করেন। ওই সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভার্র্চুয়ালি পুলিশ সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণে নিজেদের নানা প্রস্তুতির চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন উপস্থিত কর্মকর্তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগর দায়রা জজ আদালত ঢাকার অধীনস্থ বিভিন্ন আদালত থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মোট ৪১ হাজার ৪৮০টি সমন ইস্যু হয়। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৩৪৯ জন পুলিশ সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ ছাড়া চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকার অধীনস্থ বিভিন্ন আদালত থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মোট ৩০ হাজার ৯৩৮টি সমন ইস্যু হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৯৫০ জন পুলিশ সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকার আদালত হতে উল্লিখিত সময়ে মোট ৭২ হাজার ৩৮৬টি সমন ইস্যু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মোট ২২ হাজার ৯৫৪ জন পুলিশ সাক্ষী উপস্থিত হন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করতে যাওয়ায় থানা, ফাঁড়িসহ বিভিন্ন কর্মস্থলে পুলিশের জনবলের সংকট তৈরি হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ পুলিশের অন্যান্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান দুরূহ হয়ে পড়বে। যার ফলে মামলার বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হবে এবং মামলাজট বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সময় চাঞ্চল্যকর এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দিলে তার জীবননাশের হুমকি থাকে এবং পুলিশের পক্ষে জনবল সংকট থাকায় আদালতে অস্থিতিশীল পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যরা অসুস্থ থাকলে তাদের পক্ষে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যগণকে সাক্ষ্যপ্রদান করতে সমন দেওয়া হলে তারা শারীরিক অসুস্থতাসহ বা বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায়ই সাক্ষ্য দিতে অনুপস্থিত থাকেন। তারা সাক্ষ্য প্রদানের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো যাতায়াত ভাতা প্রাপ্ত হন না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রশাসন মো. সরওয়ার বলেন, আদালতের সমনের ভিত্তিতে পুলিশ সাক্ষী আদালতে উপস্থিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক কর্মঘণ্টা এবং জ্বালানি ব্যয় হয়। যার দরুন রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উক্ত সাক্ষীগণের সাক্ষ্য গ্রহণ অনলাইনে করা হলে কর্মঘণ্টা এবং জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া মামলার বিচার কাজের গতি বাড়বে বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের পুলিশ সাক্ষীদের সাক্ষ্য যাতে অনলাইনে নেওয়া হয়, সে লক্ষ্যে আমরা বিজ্ঞ আদালতসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমাদের প্রান্তে সাক্ষ্য দিতে যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার সেটা শুরু করেছি। কিন্তু আদালত প্রান্তেও অনলাইনে সাক্ষ্য নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. আজিজুল হক দিদার বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার কারাবন্দি আসামিদের হাজিরা নেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। আগামী মাসে আমরা পুলিশ সাক্ষীদের সাক্ষ্য ভার্চুয়ালি নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ জন্য ডেস্কটপসহ আনুষঙ্গিক যেসব প্রযুুক্তিগত ব্যবস্থা লাগবে সেগুলোর সংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভার্চুয়ালি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করলে বিচারের গতি বেড়ে যাবে। এ ছাড়া অনেক সময় সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হলেও নানা কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সাক্ষী অনলাইনে সাক্ষ্য দিলে এই ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে না বলে তিনি মনে করেন।

সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা বলছে, ‘আদালতের নিকট স্বীয় বিবেচনায় কিংবা মামলাসংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি প্রতীয়মান হয় মামলাটি চাঞ্চল্যকর, কিংবা মামলার কোনো পক্ষ সাক্ষী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সশরীরে হাজির করলে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে অথবা মামলাটির কোনো পক্ষ, সাক্ষী বা অভিযুক্ত ব্যক্তি দূরত্ব বা অন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন না, সে ক্ষেত্রে উক্ত আদালত মামলার যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো কার্যক্রম অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নির্দেশনা প্রদান করবেন।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram