সেপ্টেম্বর এলেই ভিন্ন এক দৃশ্য দেখে নিউ ইয়র্কবাসী। যেখানে সরকারপ্রধানের আগমনকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে উত্তাপ ছড়ায় বাংলাদেশি রাজনীতি। প্রতিবারের মতো এবারো সেই দৃশ্যের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তৎপরতার পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আগস্টে তথ্য উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কনস্যুলেট জেনারেলে হামলার ঘটনায় এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরে বেশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেট অফিস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আজ যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে যাবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মহাসচিব আখতার হোসাইন ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। আগামী ২রা অক্টোবর তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি এক সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নিউ ইয়র্কে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবার সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতাকর্মীদের ‘ভয়ঙ্কর রূপ’ দেখানো হবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২২ তারিখে জেএফকে বিমানবন্দরে এবং ২৬শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সামনে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন। এ ছাড়াও কনস্যুলেট হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি’র নেতারা আসায় এবার পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে অপর পক্ষ। বিএনপি’র দলীয় নেতাকর্মীরা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে সভা করছেন। করণীয় সম্পর্কে কর্মীদের অবহিত করেছেন নেতারা।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর দলীয় সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র শাখা না থাকলেও বিভিন্ন নামে ঐক্যবদ্ধ আছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারাও সাধারণ প্রবাসীদের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরসহ প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফলে জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধিদলের আগমনে এবং ভাষণের দিনে নিউ ইয়র্কে পক্ষে-বিপক্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ জানান, প্রধান উপদেষ্টা এবং সফরসঙ্গী বিএনপি’র মহাসচিবসহ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত। ২২ তারিখে জেএফকে বিমানবন্দরে এবং ২৬শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সামনে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিবে। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা করলে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বিতাড়িত হবেন।
এদিকে, একই নীতি অবলম্বন করে জামায়াতের অনুসারী নেতাকর্মীরাও বলছেন প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধিদলের জাতিসংঘের সফরকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন। শিবিরের প্রাক্তন নেতা সৈয়দ শারফিন মোর্শেদ জানান, প্রধান উপদেষ্টাসহ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং সফরসঙ্গীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নিউ ইয়র্কবাসী। তবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাপারে ফ্যাসিস্ট হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারীদের সম্প্রতি বক্তব্য অশালীন এবং চরম বিব্রতকর। তিনি পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়- তাহলে সাধারণ প্রবাসীরা তাদের শক্ত হাতে পাল্টা জবাব দিবে।
এদিকে, নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলে ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টাসহ সফরসঙ্গীদের সঙ্গে এনআরবি কানেক্ট ডে ব্যানারে প্রবাসীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।