বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, এলসি খোলায় জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারেনি তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র। ফলে দেশি-বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো হারিয়েছে করছাড়ের সুযোগ। তবে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েও ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারা এই তিনটি কেন্দ্র হলো কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প, পটুয়াখালীতে রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্প।
করছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কয়লা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, করছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এনবিআরকে চিঠি দিলেও তারা এসআরও জারি করেনি। করছাড় না থাকায় ভবিষ্যতে কম্পানির বৈদেশিক ঋণের ওপর সুদ ও মূলধনী মুনাফার ওপর কর ও এআইটি পরিশোধ করতে হবে। এতে বিদ্যুতের দাম বাড়বে।
এনবিআরের সর্বশেষ জারি করা ২০২৩ সালের ২৮১ নম্বর এসআরও অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুেকন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে আয়ের ওপর ১৫ বছর করছাড় (বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে) পাবে। এ ছাড়া বিদ্যুেকন্দ্রে কর্মরত বিদেশি ব্যক্তিদের আয়ের ওপর আগমনের তারিখ থেকে তিন বছর করছাড় পাবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ, রয়ালটি, বিভিন্ন ফি ও শেয়ার হস্তান্তরে মূলধনী মুনাফার ওপরও করছাড় পাবে কেন্দ্র। তবে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে না পারায় এই সুযোগ শেষ হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পগুলোকে এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এর আগে শর্ত পূরণ করতে না পারায় করছাড়ের যোগ্যতা হারিয়েছিল ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র। পরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮১ নম্বর এসআরও জারি করে এনবিআর। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রগুলোকে সুবিধা দিতে ২০১৩ সালের ২১৩ নম্বর এসআরও দিয়ে করছাড় দেওয়া হয়েছিল। এই ছাড়ের প্রধান শর্ত ছিল ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুেকন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা।
এই তিনটি বিদ্যুেকন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা তিন হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট। নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে বিদ্যুতের দাম কমে যেত। ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রগুলো দেরি করে উৎপাদনে গেলে তারা ক্যাপাসিটি চার্জ পায়। এটাই তাদের লাভ। নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে না পারায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দিচ্ছে।’
তাদের করছাড় না দিলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম তো বেড়েই আছে। তারা তাদের ক্যাপাসিটি সম্পূর্ণটা ব্যবহার করলে দাম কমে যাবে। তারা উৎপাদনে না আসার কারণেই দাম বেড়ে আছে।’ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসতে না পারায় তারা করছাড়ের সুযোগ হারিয়েছে। এখন তারা করছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেছে।’
বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে না পেরে বারবার করছাড়ের আবেদনের কারণ প্রসঙ্গে জানতে বিপিডিবির বোর্ড সচিব মুহ. রাশেদুল হক প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানির প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।