তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ নিয়ে আগের দাবিগুলোতে নমনীয় অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি। লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের পর দলের শীর্ষ নেতারা এমন অবস্থান প্রকাশ করেছেন।
গত শুক্রবার লন্ডনের হোটেল ডরচেস্টারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং ১ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় উভয় পক্ষ। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এ সমঝোতার মাধ্যমে সরকার ও দলের মধ্যে দূরত্ব কমবে এবং জনগণও নির্বাচন নিয়ে স্বস্তি পাবে।
এর আগে বিএনপি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেছিল। এদের মধ্যে শেষ দুইজন অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করেন বলে বিএনপির অভিযোগ ছিল। এছাড়া করিডোর ইস্যুতে বিতর্কিত ভূমিকায় খলিলুর রহমানের পদত্যাগও দাবি করেছিল দলটি।
তবে লন্ডন বৈঠকের শুরুতেই খলিলুর রহমানের উপস্থিতি, তারেক রহমানকে স্বাগত জানানো এবং বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিং করা—এসব ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এখন এ তিন উপদেষ্টার বিষয়ে দল নমনীয় অবস্থানে রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ ও দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের প্রতিবাদ, নগর ভবন ঘেরাও ও কাকরাইলে অবস্থানের মধ্য দিয়ে আন্দোলন জমে উঠলেও ঈদের ছুটির পর বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, এখানেও তারা নমনীয়তা দেখাবেন।
আজ (রোববার) সকালে ইশরাক হোসেন নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নাগরিক সেবা চালুর ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেছেন, “লন্ডন বৈঠকের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এই পরিবেশ ধরে রাখতেই সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। সংস্কার হবে, বিচার হবে, এবং নির্বাচনও হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকটিকে ‘যুগান্তকারী ও জাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “রাজনীতি আপসের শিল্প। ড. ইউনূস এই বাস্তবতা অনুধাবন করে রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগানোর আগ্রহ রয়েছে বিএনপির। একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে তাঁর সক্রিয় পরামর্শ প্রত্যাশা করে দলটি।