সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন সচিবালয়ের আন্দোলনরত কর্মচারীরা। অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলতে থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এর আগে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক ঘণ্টার কর্মবিরতি চলবে। আর সারাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই সময়ে কর্মবিরতি চলমান থাকবে। তবে হাসপাতালসহ অন্যান্য জরুরি সেবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও কম সময় কর্মবিরতি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে কো-চেয়ারম্যান বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। কিছুদিন পরেই কোরবানির ঈদ ও বাজেট ঘোষণা হবে। এজন্য কর্মচারীরা যাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ না হন, সে জন্য সবদিক বিবেচনা করে আগামী দিনগুলোতে আমাদের কর্মবিরতির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে জরুরি সেবার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি চলবে। মাঠপর্যায়ে সব দফতর, পরিদফতর, অধিদফতর, সংস্থা এবং ডিসি অফিস ও বিভাগীয় অফিসগুলোতেও প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
এর আগে সকালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, আন্দোলনরত সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের দাবিসমূহ মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ কর্মচারীদের ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরবেন। বর্তমানে তিনি বিদেশে আছেন। তিনি দেশে ফেরার পরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) বৈঠকে সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। যা গত রোববার সন্ধ্যায় গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
জারি করা গেজেট
সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। অধ্যাদেশে চার অপরাধের জন্য চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের (আইনানুযায়ী সবাই কর্মচারী) চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়।
সেগুলো হলো— কোনো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, এছাড়া কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
অধ্যাদেশে বলা হয়, অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।
আন্দোলনকারীরা এ অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কর্মচারীদের আন্দোলনে গত ৪ দিন ধরে এক রকম অচল হয়ে পড়ে সচিবালয়।