ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেছেন, আগে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি যারা করতেন, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একধরনের নিয়ন্ত্রণ করতেন। তখনো নানা রকমের অপরাধ হতো। এখন তা মবে রূপান্তর হয়েছে। তিনি বলেন, সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে ‘মব–সন্ত্রাসের’ সমাধান করতে হবে।
কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে চলমান অস্থিরতার বিষয়ে মনজুর আহমদ বলেন, অস্থিরতা-উদ্বেগ আগেও ছিল। এই যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানটি হলো, এর শুরুটা কিন্তু হয়েছিল শিক্ষা ও চাকরির সমস্যা (চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে) থেকেই।
শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে কোথায় যাবেন, চাকরি পাবেন কি না, জীবন-জীবিকার সমস্যা—সেটা থেকেই শুরু হয়েছিল। তারপর জনসাধারণের দুঃখ-ক্ষোভ একত্র হয়ে বিরাট আন্দোলন হলো, সরকারের পতন ঘটল। কিন্তু সেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েই চিন্তাভাবনা তেমন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার সমস্যার সমাধানে সামগ্রিক প্রচেষ্টা হয়নি।
এ কারণে সেসব সমস্যা সামনে আসছে, কিন্তু সেসব সমস্যার কথা শোনার কেউ আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষকদেরও অভিযোগ, উদ্বেগ, সমস্যা আছে। ফলে যেকোনো উপায়ে সমস্যার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু কার্যকর সমাধানের দিকে যেতে পারছি না।
এই সংকটের সমাধান কীভাবে করা যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, আগে তো সমস্যাগুলো বুঝতে হবে, স্বীকার করতে হবে। তারপর কার কী করণীয়, ঠিক করতে হবে।
একসঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ধাপে ধাপে কী করে সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে, সে রকম সুযোগ বা প্রক্রিয়া তৈরি হয়নি। খণ্ডিতভাবে যার যা সমস্যা, তুলে ধরছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলো, রাস্তায় নেমে না এলে তাদের দিকে কেউ দৃষ্টিও দেয় না। ফলে তাঁরা রাস্তায় নেমে আসছেন। তাতে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, তাদের নিজেদেরও দুর্ভোগ হচ্ছে, লেখাপড়ার সমস্যা হচ্ছে। এ রকম অবস্থা অনির্দিষ্ট সময় ধরে চলতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাসহ যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের পদক্ষেপ বা প্রতিক্রিয়া যা দেখছি, সেটা মনে হচ্ছে খণ্ডিত। সামগ্রিকভাবে চিন্তাভাবনা করে সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে কিছু করার চেষ্টাও দেখতে পাচ্ছি না। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ছাত্র-শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর একটি আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা হয়েছে। এটা শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করেছে সব সময়। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার অঙ্গীকার এখনো দেখছি না। শিক্ষাকে দলীয় রাজনীতির বাইরে রাখার একটি অঙ্গীকার দরকার। এ জন্য যে কাজটা করা যেত, সেটা হলো সব কটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া যেত। সেটা কেন এত দিনেও হলো না? সেটা করে শিক্ষার্থীদের আলাপ-আলোচনার একটা ক্ষেত্র তৈরি করা যেত।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রের ধরনই হলো তারা স্থিতাবস্থায় খুশি। নতুন কিছু হোক, একটা বড় রকমের পরিবর্তন হোক, সেটা হয়তো তারা চান না। আবার শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁদের যুক্ত করেও শিক্ষার সামগ্রিক বিষয়ে একটা আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি করা হয়নি।