স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধ বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোয়। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চায় আগে জাতীয় নির্বাচন। এ দলগুলো মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ স্থানীয় নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচন করা। তাই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তারা সোচ্চার। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন মানবে না এ দলগুলো।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু দল চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য আগে স্থানীয় নির্বাচন প্রয়োজন।
এ ছাড়া নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা আছে তাদের। সব মিলিয়ে স্থানীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক দলগুলো।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের মানুষ ১৫ বছর সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। তারা সংসদ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। কাজেই সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তাব অবান্তর ও জন আকাঙ্ক্ষার বিপরীত। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি ময়মনসিংহে দলীয় কর্মী সম্মেলনে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি ‘অ্যাসিড টেস্ট’। তিনি বলেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দিন। আমরা দেখি আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা কতটুকু। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দল-জোটগুলোও। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এলডিপিসহ মিত্র দল-জোটগুলো বিএনপির অবস্থান বা প্রস্তাবের সঙ্গেই সহমত পোষণ করেছে। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, করিডর দেওয়া বা স্থানীয় নির্বাচন করা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। বর্তমান সরকারের কাজ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি, দেব। কিন্তু আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে পবিত্র রমজান, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে। সরকারের উচিত নির্বাচন কবে হবে সে ব্যাপারে পরিষ্কার একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে জনমানুষের শঙ্কা দূর করা।
স্থানীয় নির্বাচনের দাবির বিষয়টি কিছুটা থমকে গিয়েছিল। নতুন করে দাবিটি সামনে এসেছে। গত শুক্রবার দলীয় এক কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানান জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এর দুই দিন আগে এক সংলাপে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদ। গত শনিবার এক সমাবেশে একই দাবি জানান ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় নির্বাচনের দাবির পক্ষে সংশ্লিষ্ট দলগুলো অনড় অবস্থানে রয়েছে। এ দাবি আরও জোরদার করা হবে। কারণ, দলীয় সরকারের অধীন স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে তারা আস্থা রাখতে পারছে না। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও ভূমিকা যাচাইয়ের জন্যই এ নির্বাচন জরুরি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় শূন্যতা বিরাজ করছে। এ শূন্যতা পূরণের জন্যও দ্রুত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি প্রস্তাব আছে। এটি কার্যকর করার জন্য বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা দরকার।
সূত্রমতে, শুধু স্থানীয় নির্বাচনই নয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পতিত ফ্যাসিবাদে জড়িতদের বিচার শুরু করারও দাবি জোরদার করবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা বেশ কিছু দল। পাশাপাশি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতি চায় তারা।
সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। সংস্কারের আগে গুন্ডামি মার্কা নির্বাচন জনগণ সহ্য করবে না। জনতাকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন- এ দাবিতে অচিরেই ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচি আসছে। ফয়জুল করীম আরও বলেন, ইসির সক্ষমতা যাচাইয়ে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। এ দাবি এখন অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। সূত্রমতে, গত বুধবার ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের সংলাপে ছয় বিষয়ে একমত হয়। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং ফ্যাসিস্ট ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের বিষয় রয়েছে।
একই দিন চারটি ইসলামী দল- খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সেখানেও ফ্যাসিস্টের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনসহ পাঁচ বিষয়ে একমত হয় দলগুলো।
গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ অনেক আগে থেকেই একমত। গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সেজন্য স্থানীয় নির্বাচন কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন নুর।