ঢাকা
৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:২৮
logo
প্রকাশিত : মে ৩, ২০২৫

আরও ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

আবারও সীমান্ত দিয়ে অবাধে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করছে, প্রতিদিন গড়ে ১শ’রও বেশি রোহিঙ্গা ঢুকছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন নাফ নদে ডুবে মারা গেছেন। যদিও শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলছেন, দিনে গড়ে ৩০ জন করে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। নতুন করে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ করেছে। অন্যদিকে নতুন করে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার বসবাসের জায়গা করে দিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে।

এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থল করে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। প্রতিদিন কত জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য আছে। তবে এ সংখ্যাটি কখনই শতাধিক নয়। জাতিসংঘের চিঠিতে উল্লেখ করা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে আরো ২ হাজার রোহিঙ্গা এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত বড় পরিসরে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরও কঠিন করে তুলবে। কারণ এটি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উত্সাহিত করবে।

সরকারি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। নতুন এ আগমনসহ বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৩ লাখ।

এ ব্যাপারে গতকাল বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন একান্তই জীবন বিপন্ন না হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে না আসে সে ব্যাপারে বিজিবি প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, সেটা বলে মোটিভেশনের মাধ্যমে তাদেরকে অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরাকান আর্মির নির্যাতন থেকে বাঁচতে অনুপ্রবেশ:

নাফ নদ দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, গত বছরের জুন-জুলাই মাসের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়। তারা দাবি করেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) নির্যাতন থেকে বাঁচতেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রাখাইনে তারা (আরাকান আর্মি) হত্যাকান্ড, গুম ও নির্যাতন চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে নির্যাতন চালাচ্ছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তাদের শ্রমিক হিসেবে কাজে বাধ্য করছে এবং বাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারত থেকে আসা রাখাইন (মগ) জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করছে। এই কারণেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেক রোহিঙ্গা নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিহত হয়েছেন।

নাফ নদে জেলে অপহরণ বাড়ছে :

টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তে এখন আরাকান আর্মিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফ নদে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশি জেলেরা আরাকান আর্মিদের হাতে অপহরণের শিকার হচ্ছেন। পরবর্তীতে মুক্তিপণের বিনিময়ে তারা মুক্তি পাচ্ছেন। গত ছয় মাসে তাদের হাতে এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ জেলে অপহরণের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের হ্নীলা দমদমিয়া অংশের নাফ নদে মাছ ধরার সময় নৌকাসহ চার জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

রাখাইনের ১৭ শহর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে :

২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত-লড়াই শুরু হয়। টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ধাপে ধাপে আরসা সদস্যরা রাখাইন রাজ্যে গিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। পরবর্তীতে আরাকান আর্মিদের হাতে আরসার কয়েকশ সদস্য যুদ্ধবন্দী হয়। যুদ্ধে সহস্রাধিক আরসা সদস্য নিহত হয়। ১১ মাস ধরে যুদ্ধ চলার পর ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের বুথিডং, মংডু ও সর্বশেষ রেথিডং টাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকা (২৭০ কিলোমিটার) দখলে নেয় আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহর সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram