ঢাকা
১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫৬
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৬, ২০২৫

সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে পাতা হচ্ছে প্রেমের ফাঁদ, রেহাই পাচ্ছেন না রাষ্ট্রদূতরাও

সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে পাতা হচ্ছে নিখুঁত ফাঁদ। এসব তরুণীদের নিয়ে গড়ে তোলা হানি ট্র্যাপের এসব চক্রের প্রধান টার্গেট সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও ধনাঢ্যরা। চক্রের টার্গেট থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও। দেশে ও দেশের বাইরে থেকে অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় রয়েছে এসব চক্র। এসব তরুণী ছলচাতুরীর মাধ্যমে কাউকে যৌন আবেদনের ফাঁদে জড়াতে পারলেই তার জীবন এক প্রকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের থেকে দিনের পর দিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চক্রের সুন্দরী তরুণীরা টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। তারা মূলত যৌনতার ফাঁদ আঁটে। প্রথমে অনলাইনে অর্থাৎ ইন্টারনেট ভিডিও কলে খোলামেলা আলাপচারিতার ভিডিও রেকর্ড করে জিম্মি করে ফেলে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও গভীর করে রুম ডেটের জন্য ডেকে নিয়ে বাসাবাড়িতে আটকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সূত্র বলছে, ভিডিও কলে নুডস অবস্থায় কথা বলার সময় রেকর্ড করে জিম্মি করা তরুণীদের অনেকে দেশের বাইরে অবস্থান করে। তারা টার্গেট ব্যক্তির ফেসবুকের অনেককে ফ্রেন্ড তালিকায় যুক্ত করছে। অনেক ক্ষেত্রে টার্গেট ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গেও ফেসবুকে যুক্ত হয়। পরে টার্গেট ব্যক্তির কাছে দাবি করা টাকা না পেলে এসব ছবি ও ভিডিও তার স্বজনদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকার একটি অংশ চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেশের বাইরে থাকা ওই তরুণীদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনায় সামাজিক লাজলজ্জার ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতেও চান না বেশিরভাগ ভুক্তভোগী। আবার অনেক ক্ষেত্রে চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী কিছু আইনজীবীও এ চক্রের ফাঁদে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরী নারীদের এ ফাঁদে বেশি পা দিচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সের পুরুষেরা। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ছাড়াও ‘কলগার্ল’ সরবরাহের আড়ালেও পাতা হচ্ছে হানি ট্র্যাপ। শুধু সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে মাসে এ সংক্রান্ত গড়ে ৩০টি অভিযোগ জমা পড়ছে।

বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই মামলা করা ছাড়া হানি ট্র্যাপের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি চান। তবে এখান থেকে নিস্তার পেতে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা পুলিশ।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, হানি ট্র্যাপ এক ধরনের অপকৌশল। এই ফাঁদ পাতা হয় ধনাঢ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণির লোকের ক্ষেত্রে। প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন না হলে শুধু আইন প্রয়োগ করে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ইউনিট সূত্র বলছে, ভুক্তভোগীর তালিকায় বেশি আছেন বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। এদের জিম্মি করে চক্রগুলো বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্ট খুলতে যে ফোন নম্বর তারা ব্যবহার করছে তার রেজিস্ট্রেশন ভুয়া। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) সূত্র বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইমো, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউবের শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে পাতা হচ্ছে হানি ট্র্যাপ। প্রতিদিনই ভুক্তভোগীদের থেকে আসছে অসংখ্য অভিযোগ যার মধ্যে মাসে গড়ে ৩০টি অভিযোগ আসে গুরুতর।

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি মো. আবুল বাশার তালুকদার বলেন, শুধু আমরা কাজ করলেই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। এক্ষেত্রে মানুষের সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। হানি ট্র্যাপের বেশকিছু ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব একটা অবগত নন। এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে চক্রগুলো। ভুক্তভোগীদের একজন ঢাকার দোহারের সোহেল মৃধা। তিনি বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে পরিচয় হয় এক তরুণীর। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে ভিডিও কলে নুড হয়ে কথা বলেন তারা। কথা বলার মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন ওই তরুণী। পরে সোহেল মৃধার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিচ্ছেন ওই তরুণী।

সোহেল মৃধা বলেন, আঁখি আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে ইমোতে আমার পরিচয় হয়। আবেগের বশে ভিডিও কলে খোলামেলাভাবে তার সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু সে আমার নগ্ন ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করছে। এখন পর্যন্ত বিকাশের মাধ্যমে চার লাখ টাকা আমার থেকে নিয়েছে। আঁখি আক্তার নামের ওই তরুণীকে ফোন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের পরিচয় শোনার পর ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বরিশাল থেকে এক ভুক্তভোগী চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে হানি ট্র্যাপে পড়ার অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ফেসবুকে ‘লাভারস ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সাইটে প্রবেশ করে সঙ্গীতা নামের এক নারীর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নিয়ে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক হয়। ওই নারীর মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে তিনি কথা বলেন। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করতেও রাজি হন ভুক্তভোগী। এজন্য এনআইডি কার্ড ও ছবি দেন তাদের। বেশ কিছু টাকাও এ চক্রকে তিনি দিয়েছেন। পরে চক্রটি ওই ভুক্তভোগীর নগ্ন ছবি তৈরি করে। টাকা না দিলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নগ্ন ছবিগুলো ভাইরাল করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তিভোগী।

রাজধানীর মিরপুরের এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানান, তার সঙ্গে ফেসবুকে নেপালি এক মেয়ের বন্ধুত্ব হয়। তারা ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে ভিডিও কলে নুড হয়ে কথা বলেন। হঠাৎ মেয়েটি একদিন বলে, তার মা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি দুই লাখ টাকা লাগবে। পরে টাকা পরিশোধ করে দেবে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই মেয়ে দাবি করে আরও ৫ লাখ টাকা লাগবে। টাকা না দেওয়ায় তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের বেশিরভাগই ফেসবুক, টেলিগ্রাম, ইমো, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউবের শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে হানি ট্র্যাপে পা দেন। সুন্দরী তরুণীদের ছবিসহ এসব প্ল্যাটফরমে দেওয়া বিজ্ঞাপনে বলা হয়, অনলাইনে ফ্রি কথা বলুন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ভুক্তভোগীর সংখ্যা দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও তাদের ৯০ ভাগই সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদাহানির ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নেন না। আর যারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন তাদের একটি বড় অংশই মামলা করতে রাজি হন না।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিনিয়ত আমরা সাইবার জগতে প্রবেশ করছি। বিভিন্ন বয়সের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়ছে। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতা বিষয়ে আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram