ঢাকা
১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:০০
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ৭, ২০২৫

পাচারের টাকায় বিদেশে লোটাসের বিলাসী জীবন

দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোপাট ও পাচারের হোতা ছিলেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি পরিবারের সদস্যদের যোগসাজশে এক হাজার ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংও (অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তর) করেছেন। সব মিলিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্তে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাচার করা অর্থে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুবাইয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলে বিলাসী জীবন যাপন করছেন।

এরই মধ্যে কমিশন লোটাস কামালের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে। এসব মামলার তদন্ত কার্যক্রমও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে শিগগিরই এসব মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হবে। এ ছাড়া পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য জানতে মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

মালয়েশিয়া, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে তাঁর সম্পদের তথ্য চেয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এসব মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

জনশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটের হোতা : মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে মোট এক হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালসহ ১২ এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক ১২টি মামলা করেছে দুদক। গত ১১ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাগুলো করা হয়েছে। মামলার এজাহারগুলোতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক মন্ত্রী-এমপি-উপজেলার চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বায়রার বিভিন্ন পদে থাকার সময় সিন্ডিকেট করে সরকারের নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন।

আসামিরা শ্রমিকদের অবৈধভাবে ক্ষতি সাধন করেছেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতি কর্মীর নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। এসব সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন লোটাস কামাল। অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পারিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

প্রথম মামলায় অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মালিক সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্ত্রী কাশমিরি কামালকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১০০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায়ও মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্ত্রীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৫০ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। তৃতীয় মামলায় ১১ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, চতুর্থ মামলায় ৯১ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা, পঞ্চম মামলায় ১১৯ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, সপ্তম মামলায় ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা, অষ্টম মামলায় ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, নবম মামলায় ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, দশম মামলায় ৭০ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, একাদশতম মামলায় ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং দ্বাদশতম মামলায় ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

১০১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও মানি লন্ডারিং : ১৬৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৮৫০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে লোটাস কামাল, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করেছে দুদক। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাগুলো করা হয়েছে। প্রতিটি মামলাতেই লোটাস কামালকে আসামি করা হয়েছে। প্রথম মামলায় লোটাস কামালের বিরুদ্ধে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উৎসর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা ভোগদখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর নিজ ও ব্যাবসায়িক ৩২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৪৪৬ কোটি ৪২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলায় লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামালের বিরুদ্ধে স্বামীর যোগসাজশে ৪৪ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ১৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২৬ কোটি ৬৪ লাখ এক হাজার ১৩৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় লোটাস কামালকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। আর তৃতীয় মামলায় লোটাস কামালের মেয়ে কাশফি কামালের বিরুদ্ধে পিতার যোগসাজশে ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৫ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায়ও লোটাস কামালকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া চতুর্থ মামলায় লোটাস কামালের অন্য মেয়ে নাফিসা কামালের বিরুদ্ধে পিতার যোগসাজশে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায়ও লোটাস কামালকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর লোটাস কামালের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

পাচারকৃত অর্থে দুবাইয়ে বাবা-মেয়ের সাম্রাজ্য : লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দুবাইয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। শেয়ারবাজার কারসাজিতে ব্যাপক আলোচিত-বিতর্কিত ব্যবসায়ী থেকে মন্ত্রী বনে যাওয়া লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুবাইয়ে আবাসন খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নামে-বেনামে বিপুল অর্থসম্পদ রয়েছে বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্যাক্স অবজারভেটরির (ইইউট্যাক্স) চলতি বছরের ১৬ মে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২২ সালে দুবাইয়ের আবাসন খাতে ৫৩২ বাংলাদেশির প্রপার্টি মালিকানার (অফ-প্ল্যান বা উন্নয়ন বা নির্মাণ শেষের আগেই কিনে নেওয়া প্রপার্টির মালিকানাসহ) হিসাব পাওয়া গেছে। এ তালিকায় লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের নাম রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দুবাইয়ের আবাসন খাতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রপার্টির মূল্য ২৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অফ-প্ল্যান প্রপার্টিসহ এ সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এরই মধ্যে লোটাস কামাল, তাঁর স্ত্রী কাশমিরি কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, তাঁদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram