ঢাকা
১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:০৩
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ৬, ২০২৫

মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমাবে বাংলাদেশ

রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ শুল্ক না বাড়িয়ে উল্টো তাদের পণ্যে শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। চীন যেখানে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে রীতিমতো ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ বাধিয়ে দিয়েছে, সেখানে আলোচনার পথ সুগম করতে বাংলাদেশ হাঁটছে ঠিক ‘উদার’ পথে। তবে সব পণ্যে শুল্কছাড় দেওয়া হবে না। সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যে শুল্কছাড় দিতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের পণ্যের বাজার ধরে রাখতে দেশটির মন গলাতে বড় ধরনের শুল্কছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, তারা মার্কিন পণ্যে শতভাগ শুল্কছাড় দেবে। এরপর আলোচনা করে তাদের পণ্যে শুল্ক কমাবে। আর বাংলাদেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য কিছু পণ্যের শুল্কছাড়ের প্রস্তাব তৈরি করেছে।

এটি এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে অনুমোদনের জন্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআর জানায়, যদি সব পণ্যেই শতভাগ শুল্কছাড় দেওয়া হয়, তাহলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে এক হাজার ১০ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে শূন্য শুল্ক করার কোনোই সম্ভাবনা নেই।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ ঘোষণার পর গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পৃথক পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে এনবিআর ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

এনবিআর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১০ থেকে ১২টি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বিডার পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাব এসেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারি দুটি সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যের ওপর শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এসব পণ্যের মধ্যে জেনারেটর, ভাল্ব, গরুর মাংস, অ্যাগ্রো আইটেম, কিছু শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল আইটেম রয়েছে। এসব পণ্যের শুল্কহার ২৬.২ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে আমরা যে শুল্ক আদায় করি তা খুবই সামান্য। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে শুল্ক কমালে এতে কোনো প্রভাবই পড়বে না। দেশের বৃহত্তর রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে আমাদের যা করণীয় তা আমরা করব।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালকুলেশন মেথডটা একটু অন্য রকম। সত্যিকার অর্থে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়নি।’

তথ্য-উপাত্ত বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ দুই হাজার ৭১১ ধরনের পণ্য আমদানি করেছে। যার আমদানি মূল্য ছিল ২৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকার শুল্ক পেয়েছে এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছোট-বড় দুই হাজার ৫৯০ ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। যার আমদানি মূল্য ছিল ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে এক হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দুই হাজার ২৫৭ ধরনের পণ্য আমদানি করেছে। এতে আমদানি ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে এক হাজার ১০ কোটি টাকা।

আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ক্যাপ, ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি, মোটরকার, কেমিক্যাল উড পাল্প, সফটওয়্যার, দুধ ও ক্রিম, মেশিনারিজের পার্টস, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, নিউজপ্রিন্ট রোল, ওয়াশিং ও ক্লিনিং প্রিপারশন, হ্যান্ড ডায়াফ্রাম ভাল্ব, ফুড সাপ্লিমেন্ট, টায়ার কর্ড, তেল ও পেট্রলের ফিল্টার, ইনার ডায়ামিটার, বোরিক এসিড, পেইন্ট অ্যান্ড ভার্নিশ, ইউপিএস, আইপিএস, লিফটের মেশিন, সাবান ও অর্গানিক সারফেস, অ্যালকোহল, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, বেভারেজ, অক্সিজেন থেরাপি, লোহা ও ইস্পাত, এসি, পেপার বোর্ড, ডেন্টাল সিমেন্ট, ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট, পারফিউম, টয়লেট ওয়াটার, চকলেট, প্লেয়িং কার্ড, খেজুর, কার্বন ব্রাশ, জুস, কার্বন, ডিটারজেন্ট, ইন্টারনেট মডেম, হুইস্কি, জেনারেটরের পার্টস, এক্স-রে টিউব, ইলেকট্রিক সিগারেট, শ্যাম্পু, প্রিন্টের কালি, ভিডিও রেকর্ডার, ফুটওয়্যার, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক কমানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, ‘এটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলে সম্ভব। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি থাকলে তখন স্বাভাবিক রেটের তুলনায় বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। যেমন—সাফটা চুক্তি। স্বাভাবিক রেট ১৫ শতাংশ হলে চুক্তি হতে পারে ৫ শতাংশ। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নেই। চুক্তি না হলে কোনো এক দেশের জন্য রেট কমানো যায় না।’

তবে দ্বিপক্ষীয় কোনো সমঝোতা হলে একক দেশের জন্য ভিন্ন রেট করা সম্ভব বলে জানিয়েছে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ডব্লিউটিওর মূলনীতি অনুযায়ী কোনো একটি দেশের জন্য আলাদা ট্যারিফ রেট করা যায় না। আমি যদি কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করি বা ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করি তাহলে সেটা সম্ভব। সেটা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টও হতে পারে। ডব্লিউটিওর এমএফএন (মোস্ট ফেবার্ড নেশনস) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, আমরা চাইলেও কোনো দেশের জন্য এটা করতে পারি না। তবে দ্বিপক্ষীয় কোনো সমঝোতা করলে (সে আমাকে ছাড় দেবে, আমিও তাকে ছাড় দেব) শুল্কহার কমানো যাবে।’

এখন শুল্ক কমানো হলেই কি সমাধান হবে? যদিও শুল্ক আরোপের মূল লক্ষ্য আমদানি বাড়ানো। এখন শুল্ক কমাতে গেলেও আছে নানা বিপত্তি। প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তি থাকলে এটা করা যেত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এমন কোনো চুক্তি নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্যারিফ রেট সব দেশের জন্য একই হতে হবে। এটাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) নিয়ম। তবে সরকার চাইলে এনবিআর এসআরও জারির মাধ্যমে একক একটি দেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের বিপরীতে শুল্কহার নির্ধারণ করতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।’

বড় বাণিজ্য ঘাটতি থাকার ফলে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে। শুল্কহার কমালেও এই বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আমদানি বেড়ে যাবে না নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। না প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুল্কহার কমানো যুক্তরাষ্ট্রের মূল বিষয় নয়। এই শুল্কহারেও যদি তাদের দেশ থেকে আমদানি বৃদ্ধি পায় তাহলে তারা তাদের শুল্ক কমাবে। অন্যদিকে শুল্কহার শূন্য করে দিলেও যদি আমদানি বৃদ্ধি না পায় তাহলে তাদের কাছ থেকে কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান শুল্কহার বিবেচনায় নিলে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হতে পারে। যেসব পণ্যের শুল্কহার বেশি সেগুলো বলতে গেলে আমদানিই হয় না। এখন বিলাসদ্রব্য হিসেবে স্বীকৃত গাড়ির শুল্ক যদি কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি না কিনে জাপানের গাড়িও কিনতে পারে।’

বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের মতো বহুজাতিক কম্পানি কারখানা খুলে মোবাইল উৎপাদন করছে। এতে দেশের বাজারে কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি কম দামে মিলছে মোবাইল ফোন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আইফোন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয়। শুল্কহার কমালে বড় বিনিয়োগ নিয়ে আসা স্যামসাংসহ আরো অনেক কম্পানির বড় অঙ্কের বিনিয়োগ জলে যাবে। বিনিয়োগ আনার জন্য যে সমঝোতা করা হয়েছিল, তাও রক্ষা হবে না। এ ছাড়া সাবান, ডিটারজেন্ট, বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্য আমদানির অবারিত সুযোগ তৈরি হলে তা স্থানীয় শিল্পকে ধ্বংস করতে পারে।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বুঝে না বুঝে কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সব ধরনের পণ্যে সমান ট্যারিফ রেট করলে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।’

তবে এই মত মানতে নারাজ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আপনি চাইলেও সব কূল রাখতে পারবেন না। তাকে যদি আমি ট্যারিফ প্রটেকশনের আশ্বাস দিয়ে এখানে এনে থাকি, সেটা আমাকে ঠিক করতে হবে। আর তাকেও বুঝতে হবে—এটা শুধু আমার সমস্যা নয়, তারও সমস্যা। সমস্যা আমি তৈরি করিনি, সমস্যা তৈরি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আমার গার্মেন্টস খাতকে আমার সুরক্ষা দিতে হবে। কোথাও না কোথাও আমাকে একটা ধাক্কা নিতেই হবে।’

ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বেড়ে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদান তৈরি পোশাক খাতের। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি ১.৫ শতাংশ কমে ২.২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৬.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্য অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা আগের বছরে ছিল ৭.২৮ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বাংলাদেশ তাদের দেশের পণ্য আমদানির ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। অন্যদিকে এনবিআর বলছে, তাদের এই শুল্ক নির্ণয়ের পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই হার ৫ শতাংশের বেশি নয়। তুলা ও সুতায় এই হার শূন্য।

গত সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তালিকায় আছে বাংলাদেশের নামও। বাংলাদেশি সব পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি, যা আগে ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে এই বাড়তি শুল্কহার। কিভাবে তা সমন্বয় করা যায়, সেটাই এখন মূল চিন্তার বিষয়।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram