ঢাকা
১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫২
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ৫, ২০২৫

বাড়ছে সুদের বোঝা

দিন দিন বাড়ছে সরকারি ঋণের সুদের বোঝা। এক সময় ঋণের সুদ পরিশোধ করতে সরকারের পরিচালন ব্যয়ের ৩০ শতাংশেরও কম অর্থ ব্যয় হতো। কিন্তু চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তা ৩৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

আলোচ্য সময়ে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে গেছে ৬২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৫৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৯ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪৯ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপণ অনুসারে চলতি অর্থবছরে সরকারকে সবচেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সামনের দিনগুলোয় ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ আরও তীব্র হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতিকে আরও সঙ্গীন করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় সরকারকে ব্যয় কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ঋণ জমা হয়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে। বিগত সরকার যথাযথ গবেষণা ছাড়াই মেগা প্রকল্পের জন্য প্রচুর ঋণ নেওয়ায় সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে। যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রায়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এসব ঋণ কার্যকরভাবে বা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়নি। ‘ফলে ঋণ পরিশোধে এসব প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত আয় হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে উন্নয়ন ব্যয় কিছুটা কমেছে। তবে বাড়তি সুদ পরিশোধ ব্যয়ের ওপর ভর করে সার্বিক বাজেটে বস্তবায়ন হার গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত অর্থবছর ও এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৫৩ এবং ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের হার চূড়ান্ত করেছে। অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট পরিচালন তথা অনুন্নয়ন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ পরিশোধে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে ৩৪ শতাংশ। এর পরপরই রয়েছে বেতন-ভাতা খাতে ২১ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ১২ শতাংশ, কৃষি খাতে ৮ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৭ শতাংশ এবং পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৭০১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন হার ছিল ১৫ শতাংশ। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার সামান্য কমেছে।

এদিকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মূল বাজেটে ঘোষিত ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ) এবং করবহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে ৩২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ৭০.৬ শতাংশ) আদায় হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা (জিডিপির ০.৫২ শতাংশ)। মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতির প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ৪.৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকা (জিডিপির ০.১৫ শতাংশ)। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে সরকার মোট ৩১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ঋণ করে ঘি খাওয়ার মতো। গত পনেরো বছরে মেগা প্রকল্পের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, এর বড় একটা অংশ পাচার করা হয়েছে। এর চাপ তৈরি হয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। এখন সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করতে হবে। কিছু ঋণ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram