ঢাকা
২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:৩১
logo
প্রকাশিত : মার্চ ২৭, ২০২৫

শুল্ক কমিয়েও বাজার পাচ্ছে না ভারতের পেঁয়াজ

বিগত সময়গুলোতে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের আগ্রাসনে কোণঠাসা থাকতো দেশি জাতের পেঁয়াজ। কখনো দামের কারণে, কখনো মান আবার কখনো সংকটকালে সরবরাহের কারণে ছড়ি ঘোরাতো ভারতের পেঁয়াজ। তবে এবার চিত্র ভিন্ন। এবার বাজার দখল করেছে দেশি হালি পেঁয়াজ। ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজকে টেক্কা দিয়ে গুণগত মানে অনন্য হিসেবে দেশি জাতটি এখন ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। একই সঙ্গে দাম আর মানের কারণে সুন্দর, চকচকে হালি পেঁয়াজ জায়গা করে নিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুণমানে সেরা হিসেবেই হালি পেঁয়াজ বাজার দখল করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কম। তবে বর্তমানে যে দাম চলছে, তাতে কৃষকও বাঁচবে, ক্রেতাও ঠকবে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারত বাংলাদেশের বাজার দখল করতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু এবার তাতেও ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার করে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করে দেয়। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ পেঁয়াজ রপ্তানিতে পুরোপুরি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা জানায় ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুল্কমুক্তির এ আদেশ কার্যকর হচ্ছে

চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে না পারায় ভারতে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে মজুত করা পেঁয়াজ পচে যাচ্ছিল। এতে ভারতের কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ে। এ কারণে এবার পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে।

চাক্তাইয়ের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্ত্বাধীকারী হাজী আবুল বশর বলেন, ‘আমাদের দেশের পেঁয়াজের মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। দেশীয় হালি পেঁয়াজ বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। এই পেঁয়াজ ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজের চেয়ে গুণমানে এগিয়ে রয়েছে। উৎপাদনও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে এখন দেশি মেহেরপুরি এবং হালি জাতের পেঁয়াজ রয়েছে। দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ শুধু একমাস থাকে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। তবে হালি জাতের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। দেশের পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়িসহ যেসব এলাকায় পেঁয়াজের আবাদ হয়, সেখানকার চাষিরা হালি পেঁয়াজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন। এ পেঁয়াজ সারাবছর ব্যবহার করা যাবে। ফলে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ ব্যবহার থেকে বাংলাদেশের লোকজন ধীরে ধীরে সরে আসছে। তাছাড়া বাংলাদেশে এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পেঁয়াজের দাম কম। বর্তমানে পাইকারিতে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়ার আশংকা নেই। ক্রেতারাও ঠকছেন না।

সরকারি হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অন্তত ৪ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন বেশি। তারপরও বিদেশ থেকে ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়

এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে আন্দোলনের মুখে শর্ত সাপেক্ষে ২০২৪ সালের ৪ মে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয় ভারত। তবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক এবং প্রতি টনের ন্যূনতম মূল্য ৫৫০ ডলার ঠিক করে দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার করে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করে দেয়। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ পেঁয়াজ রপ্তানিতে পুরোপুরি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা জানায় ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুল্কমুক্তির এ আদেশ কার্যকর হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের পাইকারি আড়তে বর্তমানে মেহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৭-১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ খুচরায় ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে পাইকারিতে হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজিপ্রতি ৩৫-৩৮ টাকা। খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি নাসিক জাতের পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৩ টাকায়। এই পেঁয়াজ খুচরাতে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোতে সাইজ ও মানভেদে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪৩ টাকায়। ভারতে শুল্ক কমানোর ঘোষণার আগে এসব পেঁয়াজের দাম দু-এক টাকা বেশি ছিল।

খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, এখন দেশীয় পেঁয়াজে বাজার সয়লাব। মান ভালো হওয়ায় লোকজন দেশি পেঁয়াজ বেশি খাচ্ছে। এতে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা আগের তুলনায় কমে গেছে। বাজারে ভারতীয় নাসিক ও নগর দুই জাতের পেঁয়াজ রয়েছে। বেশি রয়েছে নাসিক পেঁয়াজ। নগর পেঁয়াজ পরিমাণে কম হলেও দাম বেশি। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নগর পেঁয়াজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩৮ লাখ ২১ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরকারি হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অন্তত ৪ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন বেশি। তারপরও বিদেশ থেকে ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। প্রতিবেশী এবং স্থলবন্দরের সুবিধা থাকায় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়।

খাতুনগঞ্জের লামার বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে পেঁয়াজের ভরপুর মৌসুম। দেশে পেঁয়াজের ফলনও ভালো হয়েছে। খাতুনগঞ্জের সবগুলো আড়ত পেঁয়াজে ভরপুর। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহও বেশি।

ভারতের রপ্তানি শুল্ক কমানোর ঘোষণায় বাজারে প্রভাব পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন আমাদের দেশি পেঁয়াজে আরও কয়েক মাস চলে যাবে। অন্তত তিন মাস পেরিয়ে গেলে বোঝা যাবে, দেশি পেঁয়াজের মজুতের চিত্র। এর আগে শুল্ক কমালেও ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে তেমন প্রভাব তৈরি করতে পারবে না। কারণ এখন দেশি পেঁয়াজের মান আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram