ঢাকা
১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:০৩
logo
প্রকাশিত : মার্চ ২৪, ২০২৫

তৃতীয় পক্ষের মালিকানায় দুর্বল ব্যাংক

দেশে সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তৃতীয়পক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ জারি হলে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে প্রাথমিকভাবে একটি ‘ব্রিজ ব্যাংকের’ অধীন পরিচালিত করা হবে। তারপরও সংকট এড়াতে না পারলে তখন ওই ব্যাংকটি বিক্রি বা হস্তান্তর বা অবসায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে বিক্রি করতে ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা ও অবসায়নের প্রক্রিয়া সহজ করতে নতুন এ আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে। সংসদ না থাকায় এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। অধ্যাদেশ কার্যকর হলে, সংকটে পড়া দুর্বল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রথমে একটি ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। নির্ধারিত সময়ে ‘ব্রিজ ব্যাংক’ যদি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করতে পারে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্রিজ ব্যাংক’কে অন্য কোনো সত্তার সঙ্গে একীভূত এবং ‘ব্রিজ ব্যাংকের’ সম্পদ, অধিকার, বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে একটি তফসিলি ব্যাংককে (অস্থায়ী) সরকারের মালিকানায় নিয়ে আসতে পারবে। এমন কি, সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি বা সরকার কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির কাছে ব্যাংকটির এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। জানা গেছে, দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় থাকা ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অন্তত ৫টি ব্যাংক এখনো চরম সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংক ৪টি।

বিশেষ করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংককে চরম সংকটাপন্ন ব্যাংক হিসেবে মনে করছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা দূরের কথা, এসব ব্যাংক গ্রাহকের আমানতও দিতে পারছে না। এসব ব্যাংকের বেশির ভাগ ঋণ গোষ্ঠীগত স্বার্থে দেওয়া হয়েছে, যা এখন আর উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সংকট সামাল দিতে এ ব্যাংকগুলো প্রতিদিন তারল্য সহায়তার জন্য আবেদন করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নতুন অর্থ সহায়তা প্রদান করছে না। ফলে, গ্রাহকরা এখনো তাদের আমানত উত্তোলনে সমস্যায় পড়ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংক খাতের সমস্যা সবার জানা। সুশাসন ফেরানোর মাধ্যমে ব্যাংক পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু ব্যাংক বাঁচানো যাবে না। কেননা, কোনো কোনো ব্যাংক থেকে ঋণের ৮৭ শতাংশই নিয়ে গেছে একটি পরিবার। এসব ঋণ আর ফেরত আসবে না। মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংকটাপন্ন কোনো ব্যাংক অবসায়ন বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি হলে দুর্বল ব্যাংক বিক্রি বা হস্তান্তরে ব্যাপক ক্ষমতা পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ কার্যকর হলে সংকটে পড়া কোনো ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির লাইসেন্স বাতিল করে ব্রিজ ব্যাংকের হাতে দায়িত্ব দিতে পারবে। প্রয়োজন হলে ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। ব্যাংকের মালিকদের অনিয়মের প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। এমনকি নতুন শেয়ারধারকদের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দিতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে গঠন হবে ব্রিজ ব্যাংক : প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা এবং পর্যায়ক্রমে এটিকে তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক ‘ব্রিজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এ ব্রিজ ব্যাংকগুলো ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলার সময় প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং পরিষেবা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়াও, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে ব্যাংকের নতুন বা বিদ্যমান পরিচালকদের মাধ্যমে তহবিল জোগাড় করতে পারবে। প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে এ ব্রিজ ব্যাংককে ব্যাংকিং লাইসেন্স দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সংকটে পড়া তফসিলি ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হবে এবং অবশিষ্ট সম্পদ ও দায় অবসায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সদস্যের মাধ্যমে ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেজুলেশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সুরক্ষিত আমানতের দায় নেবে ব্রিজ ব্যাংক; তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দায় ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তর করা যাবে না। তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় হস্তান্তরের শেষ তারিখ হতে পরবর্তী দুই বছরের জন্য ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ হবে; কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে এর মেয়াদ বাড়াতে পারবে; তবে কোনোভাবেই একটি ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি হবে না। নির্ধারিত সময়ে ব্রিজ ব্যাংক যদি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করতে পারে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্রিজ ব্যাংককে অন্য কোনো সত্তার সঙ্গে একীভূত এবং ব্রিজ ব্যাংকের সম্পদ, অধিকার, বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram