সারাদেশে গণহত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় এজাহারভুক্ত (নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য) আসামিদের গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর দাবিতে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থান নিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আশ্বাস পেয়ে অবশেষে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থান নেওয়া কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সশরীরে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদেরকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসতে অনুরোধ করেন।
এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে বাংলামোটর থেকে রওয়ানা হন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের বাধায় রাত পৌনে ১টার দিকে মিন্টো রোডের মাথায় বসে পড়েন তারা।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় ১৬ বছরে যাদেরকে রাজনৈতিকভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেই অস্ত্র জমা দেননি। তবে লাইসেন্সকৃত অধিকাংশ অস্ত্রই পুলিশ জব্দ করেছে। কিন্তু লুট হওয়া অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, যেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে।’
আসিফ জানান, পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকানোর এবং দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এই বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার জানতে পেরেছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর যে অভিযান হয়েছিল, সেটা ইফেক্টিভাবে যাতে আবার পরিচালনা করা যায় এবং জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ যে অস্ত্রগুলো এখনো বাইরে আছে, সেগুলো উদ্ধার করার জন্য আমরা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত নির্দেশনা দিব। আপনারা এর দৃশ্যমান সাফল্য দেখতে পাবেন।’
কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে উঠলে তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করে আসিফ মাহমুদ আন্দোলনকারীদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরে আন্দোলনকারীরা মিন্টো রোড ছেড়ে চলে যান।
এর আগে রাতে আব্দুল হান্নান মাসউদ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন। প্রথম পোস্টে তিনি লেখেন, জন্মভূমি হাতিয়ায় সাবেক এমপি জলদস্যু মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। প্রশাসন আছে, কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রও আছে। আমার ভাইদের উপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, আমি যাচ্ছি। হয় জন্মভূমি, নয় মৃত্যু। দোয়া করবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, নেভি ক্যাম্পের পাশেই অস্ত্রভর্তি মোহাম্মদ আলীর আস্তানা।
দ্বিতীয় পোস্টে মাসউদ লেখেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যাচ্ছি, ওখানে অবস্থান করব রাত সাড়ে ১২টা থেকে। ওনারা ঘুমাবে, আর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের উপর গুলি করবে। যারা সঙ্গ দেবেন, আসতে পারেন।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ রাতের মধ্যে সব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। ৬ মাস পরও কীভাবে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো হয়! সামরিক বাহিনী কিংবা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করছেন! প্রত্যেক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে হবে। সেই ঘোষণা না আসলে আমরা অবস্থান করব।’