রাজধানীতে মাদক দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে (সিএ) ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ডিএমপিসহ পুলিশের শীর্ষ মহলে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারকে (ক্রাইম) প্রধান করে একটি কমিটি করার জন্যও বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর যখন পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সেখানে এমন ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। তবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত। নয়তো আগের সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুততর সময়ের মধ্যে এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হবে। একই সঙ্গে চলবে মামলার তদন্তের কাজ। দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদকের হাতে আসা ঘটনাস্থলের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার রহমান’র রেগনাম সেন্টার ভবনে থাকা অফিস থেকে বের হচ্ছেন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফরমের হাসান আলী। সঙ্গে দুই সহকর্মী বাশার ও ইমাম হোসেন। তিনজন এসকেএস স্কাই ভবনের ফুটপাত ধরে হেঁটে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসান অফিস থেকে বের হওয়ার পর তাঁর পিছু নেয় অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি। হাসান হেঁটে এসকেএস স্কাই ভবনের সামনে গেলে আচমকা চারদিক থেকে ৮-১০ জন লোক তার গতিরোধ করে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাসানকে কিল-ঘুসি মারতে থাকে। এর মধ্যেই হালকা গড়নের এক ব্যক্তি হাসানের পকেটে একটি ছোট ‘প্যাকেট’ ঢুকিয়ে দেয়। প্রায় একই সময়ে সেখানে উপস্থিত হয় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ। শিল্পাঞ্চল থানা এবং ডিসি অফিসে চলতে থাকে নানা নাটকীয় ঘটনা। থানায় ছুটে আসেন তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ও এসি।
হাসানের স্বজনদের অভিযোগ, থানায় ওসির রুমে এডিসি এবং এসি হাসানকে ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সন্দেহজনক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি বলেও অবহিত করা হয় তাদের। তার মামা মো. কামরুজ্জামানের জিম্মায় দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়। এসআই আবু ঈসা ও এসআই জিহান হোসাইনকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান একটি জিম্মানামা লিখে তাতে কামরুজ্জামানের সই নিতে বলেন। জিম্মানামায় সই করেন হাসানের মামা কারুজ্জামান। এসআই ঈসা জিম্মানামায় উল্লেখ করেন, ‘কতিপয় লোক এক ব্যক্তিকে আটক করেছে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে হাসানকে সুস্থ অবস্থায় তাঁকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হলো।’ হাসানকে যখন পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, তখনই এসআই ঈসার কাছে একটি ফোন আসে। এরপর হাসানকে মুক্তি না দিয়ে ১৯৩ পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা নম্বর-৩। সেই মামলায় বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে বন্দি রয়েছেন হাসান আলী।