ঢাকা
৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:০৯
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫

অদৃশ্য খরচে মহাদামি সৌরবিদ্যুৎ

সহজলভ্য সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশে অদৃশ্য খরচের কারণে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি। এমনকি দেশের বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চেয়েও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে। তাই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জমি ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে ট্যারিফ বাড়িয়ে নিয়েছেন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকরা। মূলত প্রকল্পে এসব নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চেয়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে।
দেশে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে নেওয়ার।

তাই সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমানো না গেলে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না। একসময় বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়ের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে সৌরবিদ্যুৎ। বিশ্বজুড়ে গত এক দশকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ক্রমে হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের চাপ পড়ছে বিপিডিবিসহ পুরো বিদ্যুৎ খাতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ সারা বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য হারে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ হচ্ছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২২ টাকা ৩৮ পয়সা পর্যন্ত। নবায়নযোগ্য খাত নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ। সংস্থাটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ইউনিট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের গড় দাম .০৫৩ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় গড়ে ছয় টাকা ৪৬ পয়সা পড়ে ((প্রতি মার্কিন ডলার = ১২২ টাকা ধরে)।

পাকিস্তানে এই দাম .০৩২ সেন্ট, যা টাকায় তিন টাকা ৯০ পয়সা। ভিয়েতনামে .০৮৪ সেন্ট, টাকার হিসেবে ১০ টাকা ২৪ পয়সা। সেখানে বাংলাদেশে প্রতি কিলোওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির গড় উৎপাদন ব্যয় .১৫৫ সেন্ট, যা টাকার হিসাবে ১৮ টাকা ৯১ পয়সা।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে সোলার প্যানেলসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশের দাম কমে আসায় সৌরবিদ্যুতের ক্রয় চুক্তিগুলো আগের তুলনায় অনেকটাই কম মূল্যে করা হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে সৌরবিদ্যুৎ থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন খান বলেন, ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ পরিচালিত এক সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী যেকোনো সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের আদর্শ ট্যারিফ হওয়া উচিত পাঁচ থেকে ছয় টাকা। এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য অবৈধ কমিশন বাণিজ্য, যার দায় গ্রাহকের ওপর চাপানো হচ্ছে। এটা শুধু অনৈতিক নয়, সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের বিপরীত অবস্থান। অতিরিক্ত দামে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সম্ভাবনার অপব্যবহার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যেসব সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উচ্চহারে ট্যারিফ ধরে চুক্তি করা হয়েছে সেসব কেন্দ্রের মালিকদের সঙ্গে সরকারের বসা উচিত। প্রয়োজনে চুক্তি পর্যালোচনা করে ট্যারিফ কমানো উচিত।’

জাকির হোসেন খান বলেন, ‘সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদনের প্রক্রিয়াটিতে অটোমেটেড প্রসেস থাকা উচিত। অনুমোদন পেতেই বছরের পর বছর চলে যায়। অটোমেডেট ট্রান্সপারেন্ট প্রসেস থাকা উচিত, যাতে এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। এটির প্রধান ভূমিকায় থাকবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন পেয়ে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করতে পারবে। একই সঙ্গে দুর্নীতিও কমানো সম্ভব হবে। সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। আমাদের খাসজমিগুলো শনাক্ত করতে হবে। দেশে খাসজমির ৫ শতাংশ যদি সরকার মনোনীত করে তাহলে ২৮ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব।’

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের প্রয়াসগুলো এখনো তেমন একটা সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ২০১৬ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানে (পিএসএমপি) মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অবদান ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে (দুই হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট) নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

প্রথম পর্বের অবস্থা যখন এই, সেখানে নতুন করে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট উত্পন্ন বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস ও ক্লিন এনার্জি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে সরকার ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ শর্তে বিদ্যুৎ কিনছে। এ কারণে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয় নেই।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের মোট সক্ষমতা ১৫৫০.৫৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্রিডভিত্তিক সক্ষমতা ১১৭০.৩৭ মেগাওয়াট এবং গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয় (অফ গ্রিড) এমন বিদ্যুতের সক্ষমতা ৩৮০.১৯ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জমির প্রয়োজন হয় তিন একর। সেই সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সময়োপযোগী বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনাও দরকার। তিন ফসলি জমিতে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ধরনের প্রকল্পই করা যাবে না বলে নির্দেশ না রয়েছে। মূলত জমির স্বল্পতার কারণেই প্রথম দফার লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের তথ্য মতে, গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩১ হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট।

বিপিডিবির গত এপ্রিল-২০২৪ বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে দেশের ১০টি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উত্পন্ন হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ পড়া সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সাত মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (প্রতি ইউনিটে খরচ ২২ টাকা ৩৮ পয়সা), জামালপুরের সরিষাবাড়ী তিন মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (২০ টাকা ৮৭ পয়সা), ময়মনসিংহের সুতিয়াখালী ৫০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৮ টাকা ৭০ পয়সা), লালমনিরহাট ৩০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৭ টাকা ৬০ পয়সা), দেশের সবচেয়ে বড় গাইবান্ধা ২০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৬ টাকা ৫০ পয়সা)। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশে সর্বনিম্ন ব্যয় তেঁতুলিয়া আট মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্টের। সেখানে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ ১৪ টাকা ৩০ পয়সা, যা সর্বোচ্চ ব্যয়ের কাপ্তাই সাত মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্টের তুলনায় অনেক কম।

দেশে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্রেডার কর্মকর্তারা জানান, দেশে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে প্রয়োজনীয় জমির সংকট বেশি। জমি পাওয়া গেলেও তার মূল্য অনেক বেশি। ভারতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বড় একটি অংশ নির্মাণ হয়েছে রাজস্থানে বা মরু এলাকায়। আর ভারত নিজেই সৌর যন্ত্রাংশের বড় একটি অংশ উৎপাদন করে থাকে, যেখানে বাংলাদেশ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। ভারতে এ খাতে বিনিয়োগের জন্য সরকারি সহায়তাও অনেক বেশি। বাংলাদেশে সেদিকে এগোলেও এখনো পথটা মসৃণ নয়। এ ছাড়া দেশটিতে বিদ্যুতের প্রতিযোগিতামূলক বাজারও এ খাতের অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউঅ্যাবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ‘অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পগুলোতে তেমন দুর্নীতি ও বাণিজ্য হয়নি। জমি কেনার ঝামেলাসহ নানা কারণে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগকারী খুবই কম আগ্রহী, যার কারণে এখানে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের সুযোগও কম। তেমন কোনো কারণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) ৩১টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে প্রসারিত করা। কারণ আমাদের দিন দিন আমদানিনির্ভর জ্বালানির দিকে যেতে হচ্ছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, আমাদের উৎপাদন হচ্ছে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটেরও কম। এলএনজি আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। দেশে কয়লা ও জ্বালানি তেল চাহিদার প্রায় পুরোটি আমদানি করা হচ্ছে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে বৃহৎ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সরকার যদি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের খাসজমির ব্যবস্থা করা ও নীতি সহায়তা দেয়, তাহলে এই খাত আরো দ্রুত প্রসারিত হবে। বিদ্যুতের দামও অনেকটাই কমে আসবে।’

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানে সৌরবিদ্যুৎ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় সেখানকার কম্পানিগুলো কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে। বাংলাদেশে এখনো প্রতিযোগিতা গড়ে না ওঠায় সৌরবিদ্যুতে খরচ পড়ছে ভারতের চেয়ে তিন গুণের বেশি। ক্রয় চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনতে সরকারকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণে সহায়তা, সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ ও সৌর যন্ত্রাংশ আমদানিতে আরো নীতি সহায়তা দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে জ্বালানি খাতবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিসিসের (আইইইএফএ) প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সৌরবিদ্যুতের উচ্চ মূল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হলো জমির দুষ্প্রাপ্যতা ও মাত্রারিক্ত দাম। তবে আগের চেয়ে সৌরবিদ্যুতের ট্যারিফ কমেছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে (রিভার্স অকশন্স) এই খরচ কমানো যাবে। এ জন্য রিভার্স অকশন্সের নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত এমন সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের প্রকল্প। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জমির দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে রুফটপ সোলার প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে দিনের বেলা ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে প্রতিস্থাপন করার যথেষ্ট আর্থিক উপযোগিতা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাটারি স্টোরেজ দিয়ে রাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের আংশিক প্রতিস্থাপনের সম্ভাবতা দেখা প্রয়োজন।’

বিগত সরকারের সময় ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান ২০১০’-এর অধীনে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হতো। এ ক্ষেত্রে কম্পানিগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সরকারের গৃহীত এমন ৪০টি প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এখন থেকে দরপত্র ছাড়া কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে না। উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর বিপিডিবি দেশের ১০টি স্থানে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের (নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ) কিউ এ সারহান সাদেক বলেন, ‘এখন থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহী যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এই দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই এবং এটা খুবই সচ্ছতার ভিত্তিতে হচ্ছে। সর্বনিম্ন দরদাতারা সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আদেশ পাবেন।’

সারহান সাদেক বলেন, ‘ভারতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য উদ্যোক্তারা বিনা মূল্যে ও স্বল্পমূল্যে জমি পান। সরকার গ্রিড লাইনও করে দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের উচ্চমূল্যে জমি কিনতে ও নিজ খরচে গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে হচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে এখন সোলার প্যানেল, ইনভার্টারসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশের দাম কমেছে। ফলে আমরা আশা করছি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ট্যারিফ অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে দরপত্র ছাড়াই বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্রয়চুক্তির ট্যারিফ (বিদ্যুতের দাম) পর্যালোচনার জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি এসংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসানকে আহ্বায়ক করে এবং বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব (উন্নয়ন-১) মোহাম্মদ সোলায়মানকে সদস্যসচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিদ্যুৎ জ্বালানির বিশেষ বিধান বা ‘দায়মুক্তি আইনের’ আওতায় নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্রয়চুক্তিতে অসংগতি খুঁজে বের করে এসংক্রান্ত সুপারিশ করবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram