ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান জগদ্দল মহাবিহার। একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তর পূর্ব ভারতে পরিচালিত পাল শাসন আমলে রাজা রামপাল এই বিহার নির্মাণ করেন। এই বিহারটি প্রাচীন বাংলার শিক্ষাদিক্ষার একটি জন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এত পুরনো একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান অযন্ত অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বারবার বিহার খনন করার পরে একাধিক মহামূল্যবান প্রত্নসম্পদ উদ্ধার করা হলেও কদর বাড়েনি বিহারের। অবহেলায় দীর্ঘ যুগধরে বর্তমানে এটি রয়েছে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। একটু উদ্যোগ ও সামান্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় বাঁচিয়ে রাখতে পারতো একাদশ শতাব্দীর নির্মিত এই প্রাচীন বাংলার গৌরভ।
ইতিহাস থেকে জানা গেছে, বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের চার শতকব্যাপী গৌরবময় রাজত্বকালে তাদের বিশাল সাম্রাজ্যের সর্বত্র বিভিন্ন রাজারা অসংখ্য বৌদ্ধ মঠ, মন্দির ও স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। পাল রাজাদের নির্মিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মগধের বিশালায়তন বিক্রমশীলা মহাবিহার, বিক্রমপুরের বিক্রমপুরী বিহার এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের সোমপুর মহাবিহার ও জগদ্দল মহাবিহার। ভারত সীমান্তের প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণে উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নে জগদ্দল গ্রামে এক বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত এই বিহারের প্রাচীন ঢিবি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ব পশ্চিমে ১০৫ মিটার এবং উত্তর দক্ষিণে ৮৫ মিটার। চারদিক সমতল ভূমি থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ৫.৫ মিটার। ১৯৯৬ সালে শীত মৌসুমে ঢিবির উৎখনন কাজ প্রথম বারের মতো শুরু করা হয়। ফলে একটি বোদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ আংশিক উন্মোচিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০২৩ সালে জগদ্দল বিহারের ৩২টির বেশি স্থান খনন করা হয়। খনন করে এখান থেকে অলংকৃত মূর্তি, ১৩৪টি প্রত্নতত্ত্ব, ১৪টি ব্রোঞ্জের মূর্তি, পোড়ামাটির টেরাকোটা, ৩৩টি ভিক্ষু কক্ষ এবং উভয় দিকে ৮মিটারের হলঘর পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা জগদ্দল বিহারে লুকিয়ে আছে প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন। এছাড়াও বিহারের হলঘর থেকে ৪টি গ্রানাইড পাথরের পিলার পাওয়া যায় যা দেশের কোন প্রত্নতত্ত্বে পাওয়া যায়নি। ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় এই বিহারের নাম উল্লেখিত রয়েছে। এখান থেকে উদ্ধারকৃত প্রত্নসম্পদগুলো পাহাড়পুর বিহারসহ বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই বিহারে এখনো অনেক সম্পদ রয়েছে মাটির নিচে এবং এখন পর্যন্ত একাধিক প্রত্নসম্পদ উদ্ধার করা হলেও সরকারি ভাবে নেয়া হয়নি বিহারের সংস্কারের কোন উদ্যোগ। অবহেলায় বিহারের চারপাশ রয়েছে পড়ে। মাত্র একজন লোক দিয়ে এত মূল্যবান বিহারের দেখাশোনা করা হয়। প্রাচীন স্থাপনা অবহেলায় দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হলেও সংস্কার করার দাবি জানান এলাকাবাসি ও পর্যটকরা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ.কে.এম সাইফুর রহমান জানান, আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে এবং প্রাচীন স্থাপত্য টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে বিহারের সংস্কার করা হবে। সংস্কার হলে বিহারটি পর্যটকদের জন্য একটি অন্যতম স্থানে পরিণত হবে বলে জানান তিনি।