ঢাকা
৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:০৯
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫

হিমাগারে ১ কেজি আলু রাখতে গুনতে হবে ৮ টাকা

হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া প্রতি কেজিতে এক টাকা বাড়িয়ে আট টাকা করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। আগে এক বস্তায় ৮০ কেজি আলু রাখা গেলেও চলতি বছর থেকে ৫০ কেজির বেশি রাখা যাবে না। বস্তার পরিবর্তে খরচও গুনতে হবে কেজি হিসাবে। এ ভাড়া বাড়ানোকে অযৌক্তিক দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চাষিরা।

বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে আলুর দামে বছরজুড়ে অস্থিরতা দেখা যায়। হিমাগারের ভাড়া বাড়লে এর প্রভাব পড়বে খুচরা পর্যায়ে আলুর দামেও। ভোক্তাদের বেশি দামে আলু কিনে খেতে হবে।

ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, হিসাব করলে তাদের আলু রাখার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। হিমাগার মালিকদের কোনো খরচ না বাড়লেও তারা এবারের উৎপাদন দেখে ভাড়া বাড়িয়েছেন সিন্ডিকেট করে। ভাড়া না কমালে তাদের কম দামে আলু এখনই বাজারে বিক্রি করতে হবে, যাতে তাদের পড়তে হবে লোকসানে।

ভাড়া দ্বিগুণ হয়নি, কেজিতে ১ টাকা বেড়েছে
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, চলতি মৌসুমে কেজিপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ আট টাকা, যা গত বছর সাত টাকা ছিল। এবার কেজিপ্রতি এক টাকা বেড়েছে। তবে আগের মতো ৫০ কেজির ঊর্ধ্বে বস্তা রাখার সুযোগ থাকছে না।

এ কারণেই কৃষকদের মনে হচ্ছে ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ আগে কৃষকরা সাত টাকা কেজিদরে প্রতি বস্তা ৩৫০ টাকা ভাড়া দিতেন। কিন্তু প্রতি বস্তায় আলু রাখা হতো ৮০ কেজি পর্যন্ত। এই বাড়তি আলুর জন্য কোনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়নি হিমাগারগুলো। এখন বস্তায় যত কেজি আলু থাকবে তার জন্য আট টাকা দরে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।

কয়েক বছর বাদে এবছর আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ সমিতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া নির্ধারণ করেছে আট টাকা, যা চার টাকা ছিল। মালিকরা কৃষকদের শোষণ করার জন্য এ কাজ করেছেন। এটা মানা যায় না।-জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আগে কৃষকরা বস্তাপ্রতি ৩৫০ টাকা দরে আলু রাখতেন। তারা কেজির হিসাব কখনো করেননি। ওইসব বস্তায় ৬০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত আলু থাকতো। বাড়তি আলুর জন্য আমরা কোনো ভাড়া নেইনি। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৫০ কেজির বেশি বস্তা রাখবো না। সেটা হিসাব করে কৃষকদের ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

এদিকে রাজশাহীর আলুচাষি ও জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর বাদে এবছর আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ সমিতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া নির্ধারণ করেছে আট টাকা, যা চার টাকা ছিল। মালিকরা কৃষকদের শোষণ করার জন্য এ কাজ করেছে। এটা মানা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘বেশি আলু চাষ দেখেই হিমাগারের মালিকরা সিন্ডিকেট করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ দাম অযৌক্তিক।’

আলু চাষের জন্য উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাট, রংপুরের পাশাপাশি বিখ্যাত মুন্সিগঞ্জ। সেখানকার আলুচাষি এনামুল হক বলেন, ‘এ ভাড়া বাড়লে কৃষকদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। হিমাগারে আলু রাখতে না পেরে বাজারে আরও কম দামে আলু বিক্রি করতে হবে। অনেক কৃষক এবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসবে।’

যেভাবে বুকিং হয় হিমাগার
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর হিমাগারে আলু রাখায় বস্তাপ্রতি ‘পেইড বুকিং’ ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা। সাধারণ ভাড়া বা ‘লুজ বুকিং’ ছিল ২৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরকারিভাবে বস্তায় ৫০ কেজি পর্যন্ত আলু রাখার নিয়ম। কিন্তু সচরাচর কৃষকরা আরও বেশি আলু রাখার সুযোগ পান। পেইড বুকিং আলু ওঠার এক বছর আগেই দিতে হয়। আর লুজ বুকিংয়ের ভাড়া আলু হিমাগার থেকে বের করার সময় পরিশোধ করতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গড়ে হিমাগারের ভাড়া পড়তো পাঁচ টাকা, যা এখন আট টাকা হারে দাবি করছেন মালিকরা।

সড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ
ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে রোববার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন কৃষকরা। এর আগে তারা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুর উপজেলা সদর এলাকায় আলু ফেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অনেকে শুয়ে পড়েন মহাসড়কে।

২০২১ সালে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে খরচ ছিল পাঁচ টাকা, পরের বছর সাড়ে পাঁচ টাকা, তারপর ছয় টাকা এবং গত বছর সাত টাকা নির্ধারিত ছিল। খরচ বাড়ার কারণে প্রতি বছর কেজিপ্রতি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এবছর মজুতদাররা এক হয়ে পরিকল্পিত আন্দোলনে নেমেছেন।- কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী

বিদ্যুৎ বিলসহ কোনো খরচ না বাড়লেও এ ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক বলে দাবি করেন কৃষকরা। তবে এ বিষয়ে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘২০২১ সালে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের খরচ ছিল পাঁচ টাকা, পরের বছর সাড়ে পাঁচ টাকা, তারপর ছয় টাকা এবং গত বছর সাত টাকা নির্ধারিত ছিল। খরচ বাড়ার কারণে প্রতি বছর কেজিপ্রতি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এবছর মজুতদাররা এক হয়ে পরিকল্পিত আন্দোলনে নেমেছেন।’

তিনি বলেন, ‘৫০ কেজির বেশি বড় বস্তা রাখলে শ্রম আইনে মামলা হয়। কোল্ড স্টোরের ক্যাপাসিটিও কমে যায়। সে কারণে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ব্যাংকঋণের সুদের হার চড়া। হিমাগার শিল্প পুরোপুরিই কৃষিভিত্তিক শিল্প হলেও ১২ টাকা হারে বাণিজ্যিক বিল দিতে হচ্ছে। রেয়াতি সুবিধা পাচ্ছি না। এসব কারণেই এ সিদ্ধান্ত।’

তিনি বলেন, ‘এতে কৃষকরা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানি না। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, এটা কয়েক বছর যারা আলু মজুত করে মুনাফা করেছেন তাদের চক্রান্ত। তারা কৃষকদের আন্দোলনে মাঠে নামিয়েছেন।’

কৃষি বিভাগ বলছে, এবার চার লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টন আলু। এ পর্যন্ত মাঠের ১২ শতাংশ তোলা হয়েছে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

দেশে এখন সাড়ে তিনশ হিমাগার চালু রয়েছে। এসব হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ লাখ টন, যা মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ। সিজনে প্রায় সব হিমাগার আলুতে পূর্ণ থাকে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram