ঢাকা
১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:১৮
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪

রাখাইনে হচ্ছে নতুন রাষ্ট্র, সংকটে বাংলাদেশ!

বাংলাদেশের কাছে নতুন রূপে আর্বিভূত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক এক সংকট। প্রতিবেশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও আরাকান আর্মি। কক্সবাজার সীমান্তের ওপাড়ে যেকোনো মুহুর্তে হতে পারে নতুন একটি রাষ্টের ঘোষণা। চলতি মাসেই সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইনে আশি শতাংশের বেশি অঞ্চলের দখল নিয়েছে রাজ্যটির সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মি। এতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ায়।

ফলে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের অস্থিরতার মধ্যেই আরও বড় ঘূর্ণাবতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, রাখাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে ভারত চীন আমেরিকার মতো দেশগুলো। এতে প্রশ্ন উঠেছে, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই নতুন সমীকরণে কতটা স্বস্তিকর হবে ঢাকার জন্য এই নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। এমন খবরই উঠে আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে।

দেড় দশক আগে ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় এএ হল ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান (ইউএলএ) এর সামরিক শাখা আরাকার আর্মির। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। রাখাইন নৃগোষ্ঠীর (আরাকানি) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই সংগঠন নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সামনে রেখে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় গোষ্ঠীটি। আর প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় দশকের কম সময়ে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন অনেকটাই নিশ্চিত।

এদিকে ভৌগলিকভাবে রাখাইনের অবস্থান ও সম্পদ চীন ও ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাখাইনকে নিজেদের বলয়ে রাখতে এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন এর মধ্যেই তাদের জাল বিস্তার করে ফেলেছে। জানা গেছে, রাখাইনে আছে এই দুই দেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ।

চীন রাখাইনের চকভিউতে গড়ে তুলেছে গভীর সমুদ্রবন্দর। বঙ্গপোসাগরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলায় রাখাইনের এই বন্দর চীনের মহাস্ত্র। এছাড়া এই বন্দর থেকেই সরাসরি গ্যাস যায় চীনে। দেশটির বেল্টেন্ড রোড ইনেসিয়েটিভ বাস্তবায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় তেল-গ্যাস পাঠানোর বিকল্প ও সহজ পথও এই অঞ্চলকে ঘিরে। এছাড়া মিয়ানমারের ইরাবতী নদীতে চীনের ১৩ হাজার মেগাওয়াটের এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে।

অন্যদিকে ভারতের জন্য রাখাইন মহাগুরুত্বপূর্ণ। কালাদান মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বাইপাস করে সেভেন সিস্টার ও কলকাতার মধ্যে ভারতের যোগাযোগ সহজ করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারত। এছাড়া সেভেন সিন্টারকে চীনের বিচ্ছিন্নকরণের হুমকি মোকাবিলায়ও রাখাইন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদেশগুলোর কাছেও রাখাইন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে আছে। এশিয়ার এই অঞ্চলের প্রভাব ও বানিজ্যিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাখাইনের বিকল্প নেই তাদের কাছে। এমতাবস্থা প্রশ্ন উঠেছে, রাখাইন নিয়ে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির যে নদতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে তাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও অবস্থান কি হবে?

মিয়ানমারের সরকার ও আরাকান আর্মি দুপক্ষের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক আছে ভারত ও চীনের। নতুন রাষ্ট্র গঠন হলেও এই দুই দেশের তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলে চাপ বাড়বে বাংলাদেশের।

সীমান্ত থাকা প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজিক সম্পর্ক একেবারেই সীমিত। স্পর্শকাতর রোহিঙ্গা ইস্যু, সমুদ্রসীমা বিরোধ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বাংলাদেশের আকাশ ও সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন, পাবর্ত্য অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবী করার মতো বহু কারণে দুই দেশের সম্পর্কও বরফ শীতল।

এছাড়া নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে কার্যত হাত গুটিয়ে নিয়েছে ভারত ও চীন। ফলে শরনার্থী রোহিঙ্গারা নতুন সংকট হিসেবে আর্বিভূত হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে বিরোধী বহু পুরানো। এছাড়া গত কয়েক মাস আগে চলা সংঘাতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বাহিনীর পক্ষে রাখাইনের বেশ কিছু রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করে। ফলে রাখাইনকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আরাকান আর্মি সরকার গঠন করলে সীমান্তের ওপাড়ে থাকা ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে ঢল নামারও শঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ফেরত যাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এমন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও তার সীমান্তরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেব উপস্থি হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram