তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: এই হাওর কতটুকু বহন করতে পারবে তা বুঝতে হবে, না বুঝার কারণেই এ হাওরটি শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি, পানি সম্পদ ও গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এর অতিরিক্ত প্রধান ডঃ অঞ্জন কুমার দেব রায়।
টাংগুয়ার হাওর নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমি টাংগুয়ার হাওরের ওয়াচ-টাওয়ার এলাকায় গিয়ে দেখেছি, পানি আমার কাছে বিষ মনে হয়েছে, কারণ পানি মারাত্মক দূষিত হয়েছে। পর্যটন বিকাশে স্থানীয় জনগণের অংশীদারত্ব রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে টাঙ্গুয়ার হাওর জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র প্রকল্পের সম্প্রদায় ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা গুলো বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নির্দেশনা দিলেও তা মানা হচ্ছে না। সবাই কে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। হাওর পাড়ে বাসিন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, সে বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করবো। মাছ, গাছ, পাখি, প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ছিল আজ নেই। টাংগুয়ার হাওর টি মৃত। এটিকে আমরা পুনজ্জীবিত করতে চাই। তা সম্ভব কেবল হাওর পাড়ের বাসিন্দাসহ সবার সহযোগিতায়।
এসময় তিনি টাংগুয়ার হাওর কে নিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলেন, ঘোড়া গাড়ি দিয়ে ধান টানা হয়, সেই গাড়িতে একজন বসে লাঠি দিয়ে মারছে আরও দুজন গাড়িতে বসে আছে, গাড়ি দিয়ে ধান নিতেই হবে এই অত্যাচার করা হচ্ছে। ঘোড়া দুটি ধান বহন করে নিতেই হবে তার জন্য লাঠি দিয়ে আঘাত করছে এবার কি চিন্তা করছে যে ঘোড়া দুটির মানুষ ধান বহন করার ক্ষমতা আছে কি নাই। টাংগুয়ার হাওরের অবস্থান সেই ঘোড়ার মতই হয়েছে। এ থেকে আমাদের সবাইকে বের হতে হবে।
হাউজ বোটসহ নৌযান গুলোর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, হাওরে আসবেন আমাদের কোনো বাঁধা নেই, তবে পর্যটন নীতিমালা লঙ্ঘন করবে তা হবে না। আপনারা ছোট পরিসরে আসেন, ৪০-৫০ জন পর্যটক নিয়ে একতলা দুতল বড় বড় হাউজ বোট নিয়ে আসতে হবে কেন, হাওরে এসে পর্যটকগণ হৈহল্লা করবে, হাওর ধ্বংস হয় তা করতে পারবে না। হাউজবোট গুলো কে অবশ্যই নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে। পর্যটন বিকাশে স্থানীয় জনগণের অংশীদারত্ব রাখতে হবে।
কর্মশালায় তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা ল্যাবরেটরি, পরিবেশ ও পরিবেশ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক শাহেদা বেগম, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, ঢাকা ল্যাব ডিওই পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার, অতিরিক্ত সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সমর পাল, মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়, পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ প্রমুখ।
এসময় টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, নৌপর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি, হাউজবোট ওনার্স এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় হাওর পাড়ে বাসিন্দাগণ টাংগুয়ার হাওর কে ধ্বংসের জন্য এনজিও সংস্থাকে দায়ী করে। একেই সাথে টাংগুয়ার হাওরে তাদের জমি আছে তা সরকারি ভাবে কিনে নিতে দাবী করেন। কারণ যে বা যারাই হাওর নিয়ন্ত্রণে নিক তাতে সমস্যা নেই। একেই সাথে তাদের সমস্যার কথা ও টাংগুয়ার হাওর কিভাবে রক্ষা করে পূর্বের অবস্থানে নেয়া যায় তার জন্য পরামর্শ দেন।