যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) মুখপাত্র বলেছেন, “চোখ খুলুন এবং অপ্রাসঙ্গিক ও বিক্ষিপ্ত আচরণ বন্ধ করুন।”
আইআরজিসি মুখপাত্র ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে “বেহুদা” ও “পরাজয়ের হতাশা থেকে জন্ম নেওয়া” বলে উল্লেখ করেন। যা ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিশাল ব্যর্থতার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, “আজ ইরানের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও নির্ধারক দিন। আজকের গণসমাবেশ আমাদের শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শত্রুদের উদ্দেশে শক্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—এটি ছিল জাতীয় ঐক্য, সম্মান ও প্রতিরোধের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী।”
তিনি শনিবার ইসরাইলি আগ্রাসনে শহীদ হওয়া ইরানিদের জন্য আয়োজিত রাজকীয় রাষ্ট্রীয় জানাজা অনুষ্ঠানে এসবন কথা বলেন।
এ সময় ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আমরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছি—চোখ খুলুন এবং অযৌক্তিক বক্তব্য ও বিক্ষিপ্ত আচরণ বন্ধ করুন।”
মুখপাত্র আরও বলেন, “১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক পরাজয় তাকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে, যার ফলে তিনি এখন লাগামহীন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।”
তিনি যোগ করেন, “ইসরাইলি দখলদার শাসন এবং ট্রাম্প—কেউই তাদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বরং ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিক্রিয়া এখন তেল আবিবে অস্তিত্ব সংকট তৈরি করেছে।”
আইআরজিসি মুখপাত্র বলেন, “ট্রাম্প এখনো বুঝতে পারছেন না যে, ইরানের প্রকৃত শক্তির উৎস কোথায়। যেমন ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এমন কথা বলেন, যা তার মুখ ধারণ করতে পারে না।’
“ট্রাম্প ভেবেছেন, ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলে বিশ্বব্যাপী ইরানের বিজয়ের ভাবমূর্তি বদলানো যাবে—কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন,” যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধবাজ ইসরাইল গত ১৩ জুন থেকে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক স্থাপনাগুলোর ওপর ১২ দিনের এক আগ্রাসন চালায়। পরে ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের নাতানজ, ফরদো ও ইসফাহান-এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানি সেনাবাহিনীও ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালায়। আইআরজিসি-এর এরোস্পেস ফোর্স ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’-এর অংশ হিসেবে ইসরাইলের দখলকৃত অঞ্চলজুড়ে ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২৪ জুন থেকে কার্যকর হওয়া একটি যুদ্ধবিরতিতে এই সংঘাত আপাতত থেমে রয়েছে।
এর আগে শনিবার, এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন,
“যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যি কোনো সমঝোতা চান, তাহলে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য ভাষা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “খামেনেইয়ের কোটি কোটি অনুসারীর হৃদয়ে আঘাত করা বন্ধ না করলে কোনো আলোচনার সুযোগই থাকবে না।”