ঢাকা
৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৫৭
logo
প্রকাশিত : জুন ৩, ২০২৫

যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে ঢাকা

রাজধানী ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভারের গোড়ায় কিছুক্ষণ দাঁড়ালে দেখা যায় আশপাশ ঢাকছে কালো ধোঁয়ায়। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলোর ওপরে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়। ২০-২৫ বছরের ইঞ্জিন চাপ নিতে পারে না। নির্গত করে কালো ধোঁয়া। যাত্রী ওঠা-নামার পর আবার চলা শুরু করলেও দেখা যায় একই চিত্র।

এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস-মিনিবাস-ট্রাক ঢাকা শহরের আকাশ-বাতাস দূষিত করছে। দীর্ঘদিন ধরে বহু দিনের পুরোনো এসব গাড়ি চলছে ঢাকা শহরে। দেখেও যেন দেখেছে না কেউ। সারাদেশে এমন যানের সংখ্যাও কম নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করে। কিন্তু বাস্তবে বিআরটিএ থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় এমন গাড়িরও ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেস সার্টিফিকেট না নিয়েও ঢাকার সড়ক দাপিয়ে কালো ধোঁয়া নির্গত করছে হাজার হাজার যানবাহন।

গবেষণা বলছে, যানবাহনের কালো ধোঁয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগী এবং যারা দীর্ঘক্ষণ সড়কের পাশে থাকেন তারা বায়ুদূষণে বেশি ভুক্তভোগী।

সড়কে চলতে হলে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট ও ট্যাক্সের বৈধ সনদ থাকতে হয়। সারাদেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধিত ২০ শ্রেণির প্রায় ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার যানবাহন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৬৫ হাজার গাড়িরই রেজিস্ট্রেশন এবং হালনাগাদ ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিট ও ট্যাক্স টোকেন নেই। সে হিসাবে প্রতিনিয়ত সড়কে চলা এই বিপুলসংখ্যক গাড়ি অবৈধ।

ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের যে ছয়টি উৎস রয়েছে তার অন্যতম ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যানবাহনের ফিটনেস ঠিক থাকলেও ফসিল ফুয়েল বার্ন করায় বায়ুদূষণ করতেই থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো কোনো যানবাহন বিআরটিএতে যাওয়ার পরে ফিটনেস সার্টিফিকেট পায়নি- এ ধরনের খবর আজ পর্যন্ত আমরা পাইনি।- অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার

বিআরটিএ বলছে, হিসাবটি চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি এসব গাড়ি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, মালিকরা কাগজপত্র হালনাগাদ না করায় অবৈধ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ এপ্রিল বিআরটিএ থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পুলিশ প্রশাসন যাতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে, সে জন্য চিঠিতে প্রতিটি অবৈধ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরও উল্লেখ করা হয়। বিআরটিএ একই চিঠি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে (সওজ) পাঠিয়েছে। চিঠিতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়ক এবং সেতুতে টোল দেওয়ার সময় অবৈধ গাড়ি চিহ্নিত করে হাইওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পরামর্শও দেওয়া হয়।

বিআরটিএর কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, সড়কে অবৈধ হয়ে পড়া যানবাহনের মধ্যে বাসের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার, মিনিবাস ১২ হাজার, ট্রাক সাড়ে ৫৭ হাজার, প্রাইভেটকার ৭৩ হাজার ২০০ এবং মাইক্রোবাস ৩১ হাজার।

২০২৪ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১০ হাজার ২৩৩টি মামলা এবং দুই কোটি ২২ লাখ ২২ হাজার ৬৮০ টাকা জরিমানা করা হয়। গত বছর ২১৮ জন দালাল গ্রেফতার ও ৩২২টি যানবাহন ডাম্পিং করা হয় বলে বিআরটিএ সূত্র জানায়।

রাজধানী ঢাকা ও এর বাইরের সব সার্কেলেই ২০ এবং ২৫ বছরের পুরোনো ৭৩ হাজার ৫৭টি মোটরযান চলাচল করছে। কোনোভাবেই থামছে না এসব অতি পুরোনো লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির চলাচল। বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০ বছরের পুরোনো মোট বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৭৮২টি। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৮ হাজার ১৩২টি এবং মিনিবাস ৬ হাজার ৪৭৮টি। ২৫ বছরের পুরোনো মোট ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকার আছে ৩৭ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে ঢাকায় ট্রাক রয়েছে ৫ হাজার ৯৫৮টি, কাভার্ডভ্যান ১৪৯টি ও ট্যাংকার ২৮২টি।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে সেটা সত্য। কিন্তু ফিটনেস নেই এমন গাড়ির পরিসংখ্যান বলতে পারবো না। ফিটনেস নেই এমন গাড়ি ধরলে তখন পরিসংখ্যানটা জানা যাবে। যাদের ফিটনেস নেই তারা বিআরটিএতে আসে না।- বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) (যুগ্ম-সচিব) মীর আহমেদ তারিকুল ওমর

সড়ক পরিবহন আইনে যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) নির্ধারণের বিষয়ে বলা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। ২০২৩ সালের মে মাসে বিআরটিএ বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকারের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে। এ সংক্রান্ত সরকারি ঘোষণায় অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা বলা হয়। কিন্তু বিআরটিএ এটি বাস্তবায়ন তো করতে পারেইনি, উল্টো কয়েক মাস পরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন মালিকদের চাপে বিআরটিএ পিছু হটে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ক্ষমতায় আসা অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার ১ মে থেকে এসব বেশি পুরোনো গাড়ি রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে হম্বিতম্বি করা হলেও সে সিদ্ধান্তের দৃশ্যমান বাস্তবায়ন নেই। সড়কে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি এখনো অবাধে চলছেই।

ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া সব বাণিজ্যিক গাড়ির ফিটনেস সনদের মেয়াদ এক বছর। শুধু প্রাইভেটকার ও জিপসহ ব্যক্তিগত গাড়ির ফিটনেসের মেয়াদ দুই বছর। যে কোনো গাড়ির ফিটনেস দেওয়ার ক্ষেত্রে ৫৯টি বিষয় দেখা হয়। এসব বিষয় পুরোপুরি যাচাই করলে সারাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট পাবে না বলে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা জানান। তবে ন্যূনতম বিষয়গুলো অবশ্যই দেখা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ফিটনেসের সময় যে বিষয়গুলো দেখা হয় সেগুলো হলো- গাড়ির পরিচয়, ইঞ্জিনের পাওয়ার ইউনিট, চালকের সিটের অবস্থা, বডির নিরাপত্তা, জানালার নিরাপত্তা ও অবস্থা, ইঞ্জিনের সক্ষমতা, ধোঁয়া নির্গমন, চাকা ও হুড, আকার এবং টায়ারের ধরন, টায়ারের অবস্থা, বাম্পার বার, অতিরিক্ত চাকা বহন, গাড়ি নকশা অনুযায়ী ট্রেলার কাপলিং, চাকার অবস্থা, ড্রাইভারের অবস্থান এবং পদক্ষেপ, প্রবেশের দরজা বা ফ্ল্যাপ, লাগেজ বগিসহ বডির বাইরের অংশ, বাসের অভ্যন্তর ও যাত্রী আসন, প্রবেশ ও প্রস্থান ধরন এবং প্ল্যাটফর্ম, লুকিং গ্লাসের অবস্থা, সামনের নির্দেশনা, অন্য স্বচ্ছ উপকরণ, চালককে বাতাস থেকে রক্ষা, উইন্ডস্ক্রিন ওয়াশার, স্পিডোমিটার এবং স্পিড গভর্নর, শ্রবণযোগ্য সতর্কতা, চালকের নিয়ন্ত্রণ, টেকোগ্রাফ, স্টিয়ারিং হুইল, স্টিয়ারিং কলাম, চাপ বা ভ্যাকুয়াম সতর্কতা।

পরিবহন মালিকরা সড়কে কাগজপত্র ছাড়াই গাড়ি চালাতে পারেন। সরকারি কর্তৃপক্ষ বারবার ছাড় দেয়। পরিবহন মালিকরাও ম্যানেজ করে চলেন। এজন্য বিআরটিএ ও পরিবহন মালিক উভয়েই দায়ী। অবৈধ গাড়ির সংখ্যা একদিনে তো সাত লাখ হয়নি।- যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান

এছাড়া বিল্ড আপ চাপ বা ভ্যাকুয়াম, হাতের নিয়ন্ত্রণে যন্ত্রাংশ ঠিক রাখা, হ্যান্ড লিভার যান্ত্রিক ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে, পায়ের ব্রেক ঠিক রাখা, ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে কি না, যানবাহনের ব্রেক হাত দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা, হ্যান্ড লিভার যান্ত্রিক ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে, পায়ের ব্রেক ঠিক রাখা, ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে কি না, চ্যাসিসের অবস্থা, বৈদ্যুতিক তার এবং সরঞ্জাম, ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশন মাউন্টিং, তেল ও বর্জ্য ফুটা, জ্বালানি ট্যাংক ও সিস্টেম, নিষ্কাশন ও বর্জ্য সিস্টেম, সাসপেনশন লিঙ্কেজ ও পিভট, বসন্ত ইউনিট, স্টিয়ারিং লিঙ্কেজ, স্টিয়ারিং, পাওয়ার স্টিয়ারিং, ট্রান্সমিশন শিফট, অতিরিক্ত ব্রেক, ব্রেক অ্যাকুয়েটর, সামনের লাইট, পেছনের বাতি, বাধ্যতামূলক প্রতিফলক, দিক নির্দেশক, হেড ল্যাম্প, বাতি বন্ধকরণ ও ট্যাক্সি মিটার ইত্যাদি।

নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে ‘বাংলাদেশে বায়ুদূষণের উৎস: ইটভাটা ও যানবাহনের অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের গবেষণায় এসেছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ১০ দশমিক ৪ শতাংশের উৎস যানবাহন।

গবেষণায় আরও এসেছে, ঢাকার ৮৪ শতাংশ বাস-মিনিবাস নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে কালো ধোঁয়া ছাড়ে। ৬৯ শতাংশ ট্রাক ও ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ হালকা যানবাহন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি দূষণ করছে। বেশি মাত্রায় দূষণ করে ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন’ অনুযায়ী, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ছিল ঢাকা। অন্যদিকে, গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফিনল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ রোধ করা গেলে বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬ জনের অকাল মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। বায়ুদূষণের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, তাদের ৪৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরের মানুষ।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমরা যে ট্র্যাডিশনাল যানবাহন ব্যবহার করছি বিশেষ করে পুরোনো যে বাস বা অন্য বাহন আছে, সেগুলো থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে নিয়মিত। কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, পিএন-২.৫, পিএন-১০ যেগুলো পরিবেশ দূষিত করে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশের আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের যে ছয়টি উৎস রয়েছে তার অন্যতম ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যানবাহনের ফিটনেস ঠিক থাকলেও ফসিল ফুয়েল বার্ন করায় বায়ুদূষণ করতেই থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো কোনো যানবাহন বিআরটিএতে যাওয়ার পরে ফিটনেস সার্টিফিকেট পায়নি- এ ধরনের খবর আজ পর্যন্ত আমরা পাইনি। অর্থাৎ, যাদের ফিটনেস নেই তারাও কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে কত সংখ্যক যানবাহনে ফিটনেস নেই তা নিয়ে ২০১৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআরটিএ একটি জরিপ করেছিল। সেই জরিপে দেখা যায়, সাড়ে ছয় হাজার যানবাহনের এক তৃতীয়াংশের ফিটনেস নেই। এদের অধিকাংশই গণপরিবহন।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু ঢাকা শহরে নামলেই খালি চোখে দেখা যায়, বেশিরভাগ গাড়িই ফিটনেস রক্ষণাবেক্ষণ করে না। এই গাড়িগুলো দিনের বেলায় চললেও ধোঁয়ায় অন্ধকার করে ফেলে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, র‍্যাম্প ও ফ্লাইওভারের গোড়ায় যখন গবেষণার জন্য আমরা দাঁড়াই, ওপরে উঠতে গেলেও কষ্ট হয় এবং গাড়িগুলোর ইঞ্জিন থেকে মারাত্মকভাবে কালো ধোঁয়া নির্গত হতে থাকে। ঢাকায় বায়ুদূষণের মোট ১৫ শতাংশ দায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহন।’

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২৫ বছরের বেশি পুরাতন যানবাহন বাতিল করার জন্য, প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছিল। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন চাপের মুখে সেটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয় বলেও জানান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান।

এসব যানবাহনে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘কালো ধোঁয়ায় বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী, শিশু, শ্বাসকষ্টের রোগ, ট্রাফিক পুলিশ, ফুটপাতের ব্যবসায়ী এবং সড়কের পাশে যারা বসবাস করে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গর্ভবতী মায়ের শিশু পর্যন্ত দূষিত বাতাস সেবন করে। গর্ভের শিশুর ব্রেনের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়, সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করা এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে আইকিউলেস হয়ে অনেক সময় দেরিতে কথা বলে। শিশু জন্মের পর পর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর একজন পরিচালক বলেন, বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা সড়কে অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান করছেন। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের জরিমানা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারাও সড়কে অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পাশাপাশি অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইজিকেও আমরা জানিয়েছি।

বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) (যুগ্ম-সচিব) মীর আহমেদ তারিকুল ওমর বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে সেটা সত্য। কিন্তু ফিটনেস নেই এমন গাড়ির পরিসংখ্যান বলতে পারবো না। ফিটনেস নেই এমন গাড়ি ধরলে তখন পরিসংখ্যানটা জানা যাবে। যাদের ফিটনেস নেই তারা বিআরটিএতে আসে না।’

মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘পুরোনো মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি ডাম্পিং করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমরা সে কাজটা শুরু করছি।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধের কৌশল বের করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা সড়কে কাগজপত্র ছাড়াই গাড়ি চালাতে পারেন। সরকারি কর্তৃপক্ষ বারবার ছাড় দেয়। পরিবহন মালিকরাও ম্যানেজ করে চলেন। এজন্য বিআরটিএ ও পরিবহন মালিক উভয়েই দায়ী। অবৈধ গাড়ির সংখ্যা একদিনে তো সাত লাখ হয়নি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. জোবায়ের মাসুদ বলেন, ‘প্রত্যেকটি কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো লক্কড়-ঝক্কর বাস-মিনিবাস কিংবা বায়ু দূষিত হয় এমন কোনো গাড়ি সড়কে চলবে না। ফিটনেস থাকার পরেও যদি গাড়ি লক্কড়-ঝক্কড় কিংবা বায়ু দূষিত করে সেসব গাড়িকে রিপেয়ার করে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু মালিক বায়ু দূষিত করে এমন গাড়ি সড়কে চালায়। এজন্য আমরা পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছি যাতে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়। বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট করেও অনেক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, ডাম্পিং করেছে। হয়তো শতভাগ গাড়ি মোবাইল কোর্টের আওতায় আসেনি, তবে অনেক গাড়ির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram