ঢাকা
২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:৫২
logo
প্রকাশিত : মে ২০, ২০২৫

শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সরকারি চাকরিজীবীদের দ্রুত বরখাস্তের বিধান আনছে সরকার

সরকারি কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে, তাদেরকে দ্রুত বরখাস্ত করার বিধান আনছে সরকার। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সংশোধিত আইনের খসড়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে চলা শাস্তিমূলক মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে এ সংশোধন আনা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা একটি দ্রুত এবং সুশৃঙ্খল শাস্তিমূলক কাঠামো চালুর উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এই আইন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা রোধ করবে; একইসঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সেবা প্রদানে মনোযোগী রাখতে সহায়তা করবে।

সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একদল কর্মকর্তা দলবদ্ধভাবে জনপ্রশাসন সচিবকে অবরুদ্ধ করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি আদায় করেছেন।

প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ কর্মবিরতিতে গেছেন, কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন।

এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মনে করছে, সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবং আন্দোলন, সভা-সমাবেশ ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিকে নিরুৎসাহিত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ প্রয়োজন রয়েছে।

ফলে নতুন সংশোধিত আইনে সরকার সভা-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও ধর্মঘটসহ যে কোনো ধরনের দলবদ্ধ কর্মসূচিকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এসব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর
বর্তমান প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতিবেদন দাখিল এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ প্রশাসনিক ধাপে যেতে হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আপিল করার অধিকারও রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে নতুন আইনে এসব বাদ দিয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রাখা হচ্ছে।

নির্দিষ্ট সময়সীমা
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে। এরপর অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ২০–২৫ কার্যদিবস সময় লাগবে।

কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে জবাবদানের সময়সীমা শেষ হওয়ার দিন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন।

নতুন আইন অনুযায়ী, দাবি আদায়ে দলবদ্ধ কর্মসূচি, বলপ্রয়োগ, সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি—সবকিছুই শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেউ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে অন্যকে প্ররোচিত করলেও একই শাস্তির আওতায় পড়বেন। কর্মস্থলে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে।

তবে আইনের এই খসড়া নিয়ে সরকার জনমত নেয়নি। সচরাচর আইন প্রণয়নের আগে মতামত আহ্বান করা হলেও এবার গোপনীয়ভাবে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সমালোচনার মুখে উপদেষ্টা নিয়োগ
চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বেশ সমালোচনা হয়। আইনের খসড়া পাশের জন্য এর আগে একবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঠানো হয়েছিল। তখন উপদেষ্টা পরিষদ সেটি অনুমোদন না দিয়ে আরও পর্যালোচনার নির্দেশনা দেয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ১৬ মে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ও জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ওই সভায় উপদেষ্টারা খসড়ায় প্রস্তাবিত সংশোধন সম্পর্কে মত দেন এবং পরে লিখিতভাবে মতামত দেন।

তাদের মতামতের আলোকে আইনটির খসড়া পুনরায় সংশোধন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন এটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশ
জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে জারি হওয়া 'সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯'-এ চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির বিধান ছিল। অপরাধগুলো ছিল—শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অযৌক্তিক অনুপস্থিতি, অন্যদের কাজে বাধা দেওয়া এবং প্ররোচিত করা। আর শাস্তি ছিল—বরখাস্ত, অব্যাহতি ও পদাবনতি বা বেতন হ্রাস।

পরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় অধ্যাদেশটি রহিত হয়ে যায়। ২০১৮ সালে প্রণীত ‘সরকারি চাকরি আইন’-এর মাধ্যমে সেই অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়।

তবে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশটি পুনর্বহালের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গত মার্চে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে বলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা বেড়েছে। অনেকে আইনানুগ নির্দেশ পালনেও অনীহা প্রকাশ করছেন। এতে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে এবং সরকারি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

তবে উপদেষ্টা পরিষদ ১৯৭৯ সালের পুরনো অধ্যাদেশ ফেরানোর বিপক্ষে। তারা বলছেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের আইনের সংশোধনের মাধ্যমেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram