অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: মালদ্বীপ থেকে বাড়িতে আসে বাবার লাশ। রাতভর বাবার লাশের পাশে ছিলেন ছেলে। সকালে জানাজা নামাজ পড়ে লাশ দাফন করে দাখিল পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে গেলেন ছেলে। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বড় ডালিমা গ্রামে।
স্বজনরা জানান, উপজেলার নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠী ইউনিয়নের বড় ডালিমা গ্রামের আলাউদ্দিন আহম্মেদের ছেলে জসিম উদ্দিন দীর্ঘ ৬ ছয় বছর ধরে মালদ্বীপে ছিলেন। মালদ্বীপের কুলহুধুফুশি আইনল্যান্ডে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতেন জসিম। গত ২৬ এপ্রিল মালদ্বীপের কুলহুধুফুশি রিজওনালায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জসিম। মারা যাওয়ার চারদিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে মালদ্বীপ থেকে লাশ বাড়িতে আনা হয়। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শেষ বারের মত জসিমকে দেখতে তার বাড়িতে ভীড় জমায় পাড়া প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবরা।
নিহতের বড় ভাই ফজলুর রহমান ফোরকান বলেন, তার ভাই জসিম উদ্দিনের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে মো. মেহনাব হোসেন পূর্ব খাজুরবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন। কালাইয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে সে পরীক্ষায় দিচ্ছেন। আজ তার কৃষি পরীক্ষা। মেয়ে জারিন ৫ম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহত জসিম উদ্দিনের ছেলে বলেন, বাবা আগে সৌদি আরব থাকতেন। পরে মালদ্বীপে যান। আমার জন্মের পর তাকে মাত্র ৫ বছর কাছে পেয়েছি। তখন আমি ছোট ছিলাম। তার সাথে কাটানো কোনো স্মৃতি তেমন মনে পড়ছে না। মালদ্বীপে আছেন ৬ বছর ধরে। তার সাথে কথা হত ভিডিও কলে। আসছে কোরবানির ঈদে বাড়ি ফেরার কথা। বাবা ঠিকই ফিরছেন তবে লাশ হয়ে। যেদিন মারা যায় সেদিন আমার ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। আজ দাফন শেষ করে কৃষি পরীক্ষা দিতে হলে যাচ্ছি।
নিহতের স্ত্রী মাসুমা আক্তার বলেন, প্রায় ৭ বছর আগে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মালদ্বীপ গিয়েছিলেন স্বামী জসিম উদ্দিন। স্বপ্ন ছিল কাজ করে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন। সংসারে ফিরিয়ে আনবেন সুখ-স্বচ্ছলতা। হাসি ফুটাবেন স্ত্রী সন্তানদের মুখে। স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তেও এসেছিলেন। কথা ছিল ঈদুল আযহায় বাড়ি ফিরবেন। পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ করবেন। এখন ঈদের আগেই বাড়ি ফিরলেন। তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।