জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’টি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় স্থাপনের দাবী উঠেছে। উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে অবস্থিত ১১০ একর আয়তনের একটি বিশাল জমি, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানকে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে উপহার দেওয়া হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একদিকে কাপ্তাই মহাসড়ক, অন্যদিকে কর্ণফুলী নদী বেষ্টিত এই প্রজেক্টটি বর্তমানে সমাজসেবা দপ্তরের আওতায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে হাসপাতাল স্থাপিত হলে তিন পার্ব্যত্য এলাকাসহ উপকৃত হবে রাঙ্গুনিয়ার আশেপাশের উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরের প্রায় এক কোটি মানুষ। নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এই জায়গায় রয়েছে হেলিকপ্টার নামার ব্যবস্থা। অন্যদিকে জমি অধিগ্রহণের কোন ঝামেলা নেই এবং বিশ্বমানের হাসপাতাল স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষাতেও জায়গাটি উত্তম হবে বলে ইতিপূর্বে বিবেচিত হয়েছিলো। তাই সুলতান আল নাহিয়ানের এই প্রজেক্টেই স্থাপিত হোক চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
বৃহস্পতিবার সকালে এই দাবীতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং প্রজেক্ট এলাকা ঘুরিয়ে দেখান বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম।
স্থানীয় সুত্র ও বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে সফরের সময়, শেখ জায়েদ বাংলাদেশে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার দ্রুত সাড়া দেয়, জমিটি অধিগ্রহণ করে এবং ১৯৮৫ সালে এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে হস্তান্তর করে। আমিরের কাছে নিবন্ধিত হওয়া সত্ত্বেও, স্থানীয়রা এটিকে "সৌদি প্রকল্প" নামে চেনে। ১১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হলেও পাহাড়ি বালি নেমে চারপাশে আরও শতাধিক একর ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যায়। এই প্রজেক্টটি তিন পার্বত্য এলাকা এবং উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এর পশ্চিমে ২ কিলোমিটারের মধ্যে রাউজান, ১০ কিলোমিটারের মধ্যে হাটহাজারী, ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর, পূর্বে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে কাপ্তাই, ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে রাজস্থলী, ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে রাঙামাটি সদর, ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বান্দরবান সীমান্ত, ৮ কিলোমিটারের মধ্যে কাউখালী, দক্ষিণে নদীর অপরপ্রান্তে বোয়ালখালী, ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পটিয়া এবং নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সরাসরি প্রজেক্ট এলাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর পাড় থেকে শুরু করে ১১০ একরের বিশাল এই প্রজেক্টের চারপাশে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর দ্বারা আবৃত। এরমধ্যে নদীপাড়ে প্রজেক্টের উপরে উঠলেই এক নজরে দেখা মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের প্রকৃতি। চারদিকে ছয়টি বিশাল গেট, সীমানা প্রাচীর এবং একটি রাস্তা নির্মাণ করা রয়েছে। রয়েছে ১১০ একর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার উপযোগী বিশাল জেনারেটর ব্যবস্থা। তবে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নানা উদ্যোগের কথা শুনা গেলেও কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়নি এই প্রজেক্টে। অবহেলার কারণে পাহাড়ি এলাকায় ঝোপঝাড় এবং আগাছা দেখা গেছে।
মো. ইউসুফ নামে এক স্থানীয় যুবক বলেন, "কয়েক বছর আগে এই প্রজেক্ট এলাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭,০০০ কোটি টাকা অর্থায়নে একটি বিশ্বমানের নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা শোনা গিয়েছিল। এই উপলক্ষে, ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু প্রকল্পটি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়নি। চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল স্থাপনের জন্য এরচেয়ে উপযোগী জায়গা সম্ভবত পুরো বাংলাদেশে আর একটিও নেই।"
বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, মাত্র এক টাকা মূল্যে আরব আমিরাতের তৎকালিন আমির সুলতান আল নাহিয়ানকে উপহার হিসেবে এই জায়গাটি দেয়া হয়েছে। এই ১১০ একর ভূমি এখনও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জমি দেয়ার কারণে বেতাগীর শত শত মানুষ বসত ভিটা হারিয়েছে। প্রজেক্টের আশেপাশের গুনগুনিয়া বেতাগী মৌজা, চেংখালী মৌজা, কাউখালী মৌজা, তিনসৌদিয়া মৌজার শত শত একর ফসলি জমি ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। ইতিপূর্বে হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হলে স্থানীয়রা খুশি হয়েছিলো। কিন্তু তা আবার না হওয়ায় স্থানীয়রা হতাশ হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, "বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস মহোদয়ের বাড়ি আমাদের পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী উপজেলায়। তার বাড়ি থেকে কাপ্তাই সড়কপথেই এই প্রজেক্টের অবস্থান কাছাকাছি। তাই প্রতিবেশী হিসেবে তার প্রতি আমরা আশাবাদী। চারপাশে নদী ও সড়কপথে চমৎকার অবস্থানের কারণে এই প্রজেক্টে সহজেই আসা যাবে। এখানে হাসপাতাল গড়া হলে আলাদা করে জায়গা অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন হবে না। তাই এখানে হাসপাতাল হলে অবস্থানগত কারণে অন্তত এক কোটি মানুষ দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। পার্বত্য দুর্গম এলাকার রোগীও সহজেই পৌঁছাতে পারবেন এখানে। হেলিকপ্টার নামার ব্যবস্থা থাকায় আকাশপথেও সহজ। সবমিলিয়ে এতদঅঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবী, এই প্রজেক্টে হোক চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।"