মো: এনামুল হক, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার বেলাল পল্লি শিশু উন্নয়ন এতিমখানায় কাগজ-কলমে এতিম দেখিয়ে গত দুই বছরে প্রায় আট লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের বরাদ্দের এ টাকা আত্মসাৎ করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। মাদরাসার এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তথ্যানুযায়ী জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী আটোয়ারী এলাকার বেলাল হোসেন মাদরাসাটি ২০২১ সালে স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এটা নিবন্ধন পায়, নিবন্ধন নম্বর ২১৭। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রাপ্ত হয়। গ্রান্ট প্রাপ্তির বছরে ১০ জন এতিমের নামে মাসে দুই হাজার করে দুই কিস্তিতে দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২২ জন এতিম শিশুর জন্য দুই কিস্তিতে ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৫ জন ছাত্রের জন্য প্রথম কিস্তির ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করতে সমাজসেবা অফিসে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্রের দেখা মিলেনি। মাইন উদ্দিন নামের একজন শিক্ষকের দেখা মিললেও কিছু তথ্য চাওয়ায় পরিচয় বদলে ফেলেন তিনি। বলেন মাদরাসার কেউ না তিনি। সরকারি বইয়ের স্থুপ পড়ে আছে রুমে। নামমাত্র রান্নাঘর আছে। তবে সেখানে যে কয়েক বছরে রান্না হয় না তা স্পষ্ট।
স্থানীয়রা জানান, মাদরাসায় পড়ালেখা তো দুরের কথা, সেখানে কোন ছাত্রই নেই। বেতনভুক্ত কোন শিক্ষক রাখেননি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেন। তবে মাঝেমধ্যে মাইন উদ্দিন নামে একজন হুজুর আসে।
মাদরাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, বরাদ্দ বা ছাত্রের বিষয়ে কিছু জানি না। কয়েকদিন হল আমাকে কমিটিতে অলিখিত দায়িত্ব দেওয়া হয়। বরাদ্দ ও ছাত্রের বিষয়ে আগের কমিটি ভাল বলতে পারবেন।
তৎকালীন মাদরাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.ওমর ফারুক বলেন, আগে ছাত্র ছিল, রান্নাও হয়েছে প্রতিদিন। একজন ছাত্রের জন্য কি দুই হাজার টাকা দিয়ে চালানো সম্ভব। তারপরও চালানো হয়েছে। আমি ছয় মাস আগে কমিটি থেকে বের হয়ে আসছি। এখন কি অবস্থা বলতে পারব না।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে বার বার কল দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
আটোয়ারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো.আবু তাহের বলেন, এ কর্মস্থলে আমি নতুন। আগে কি হয়েছে তা বলতে পারব না। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম কিস্তির বরাদ্দ হয়েছে। আমি মাদরাসা পরিদর্শন না করে বিল ছাড় করব না।