মো: মোশাররফ হোসেন মনির, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের বিনা অপরাধে গ্রেফতার ও পুলিশ ও সমন্বয়কদের দায়ের করা মিথ্যা মামলা দিয়ে বাস মালিক শ্রমিকসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করে কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখা।
হঠাৎ করে ঈদ মৌসুমে বাস বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সকালের রাস্তায় বের হয়ে গন্তব্যের বাস না পেয়ে আটোরিকশা-ভ্যানে রওনা দিতে হয়েছে তাঁদের।
এর আগে কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন এলাকায় যানযট নিরসনে কোম্পানীগঞ্জ বাস-মালিক সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় মুরাদনগর উপজেলার কিছু সমন্বয়ক সিরিয়ালের বাহিরে সিএনজি চালিত আটোরিকশা নিতে চাইলে এক লাইনমেনের সাথে ওই সমন্বয়কদের বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে সমন্বয়করা ওই লাইনমেন আবুল কালামকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেয়। পরে শ্রমিক আবুল কালামের মুক্তির দাবিতে মুরাদনগর থানার সামনে মালিক-শ্রমিক লোকজন বিক্ষোভ করলে সমন্বয়কও মালিক-শ্রমিদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সমন্বয়ক বাদি হয়ে পৃথক দুইটি মামলা করে। যাতে মালিক, শ্রমিকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতার অব্যাহত রাখার জেরে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সকল রোডের বাস চলাচল বন্ধ রাখে ধর্মঘট পালন করে কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা ও গোমতী, চট্টগ্রামগামী প্রান্তিক, হানিফ, বিআরটিসি, কুমিল্লা ও বি-বাড়িয়াগামী বাস রয়েল সুপার, ফারজানা, সুগন্ধা, ফারহানা ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারসহ সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পরিবহন শ্রমিক আল-আমিন বলেন, আমরা শ্রমিক মানুষ, আমরা পরিশ্রম করে সংসার চালাই। আমাদের আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের শ্রমিকদের কাজে ফিরার ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।
রয়েল সুপারের মালিক জহির খান বলেন, সোমবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ সিএনজি স্টেশনে গাড়ীর সিরিয়াল নিয়ে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে থানায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে মুরাদনগর থানা পুলিশ বেশকিছু শ্রমিককে গ্রেফতার করে এবং শ্রমিকদের উপর মামলা দিয়ে হয়রানি করছে, এই প্রতিবাদে শ্রমিকরা ধর্মঘট করছে। আমরা গাড়ীর মালিক, কিন্তু গাড়ীতো চালায় শ্রমিকরা। আমরা মালিকপক্ষ তাদের অনেক বুঝিয়েছি যে এখন ঈদের সময়, গাড়ী বন্ধ করলে মানুষের দুর্ভোগ হবে। তবুও তারা তাদের উপর পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে আজ বুধবার অর্ধবেলা ধর্মঘট করেছে।
কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখার সভাপতি হাজী ইদ্রিস বলেন, কোম্পানীগঞ্জ বাজারের যানযট নিরসনে বাস-মালিক সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেয়। যার খরচ বাস মালিক সমিতি বহন করে থাকেন। দায়িত্বে থাকা লাইনমেন আবুল কালামকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেয় কিছু সমন্বয়ক পরিচয় কারীরা। আর সেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালিক শ্রমিকদের উপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধের দাবীতে আজ আমাদের ৬ঘন্টা ধর্মঘট চলছে। কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে সকল যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যদি অনতিবিলম্বে পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারনে বাস চলাচল বন্ধের খবর পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।