প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার প্রায় চার মাস পর বরখাস্ত করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে।
শনিবার (১৭ মে) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) স্বপন কুমার রায় চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়াকে সাময়িক বরখাস্তের এ আদেশ জারি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিপিইও স্বপন কুমার রায় চৌধুরী।
মনিবুল হক বসুনিয়া রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক ও শিক্ষা-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। ২০২০ সালে শিক্ষকদের দৈনিক টিফিন ভাতা ৬ দশমিক ৬৬ টাকা নির্ধারণের বিরোধিতা করে লিখিত আবেদন করেছিলেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জারি করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যা সরকারি ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছে। এ ধরনের পোস্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)-এর ৭(ঘ) ও ১০(৩)(ছ) অনুচ্ছেদ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধির পরিপন্থী। এসব অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘শিক্ষকদের পেশাকে অর্থমূল্যে বিবেচনা করা যাবে না। কেউ যদি মনে করেন তার পোষাচ্ছে না, তাহলে প্রাথমিকে না থেকে অন্য পেশায় চলে যেতে পারেন।’
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া ২৬ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘উপদেষ্টা সাহেব, আপনি কোন কোটায় উপদেষ্টা হয়েছেন তা আমার জানা নেই। আপনার কথাবার্তা একদম ফ্যাসিস্ট আমলের মন্ত্রীদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’ এই পোস্টকে কেন্দ্র করেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া বলেন, ‘উপদেষ্টার বক্তব্যে শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। আমি একজন সংগঠক হিসেবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি শিক্ষকদের অসম্মান করেছেন, সেটারই প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।’
ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, উপদেষ্টা সাহেব আপনি যদি শিক্ষকদের অবমাননা করেন, তাহলে আপনিও নিজের পেশায় ফিরে যান। আপনি ডাক্তার, আপনি চিকিৎসা পেশায় ফিরে যান। আজ চার মাস পর এই পোস্টের জন্য আমাকে বরখাস্ত করা হলো, বিষয়টি বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে লিখছি। এমনকি আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধেও লিখেছি, কিন্তু তখন এমন কিছু হয়নি। জুলাই আন্দোলনের পর ভেবেছিলাম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এসেছে। কিন্তু এখন আবার কণ্ঠরোধ শুরু হলো।’
এদিকে বরখাস্তের আগে শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়াকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। বরখাস্তের বিষয়ে ডিপিইও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টের জন্য আগেভাগে শোকজ করা হয়নি। এখন তার বিরুদ্ধে মামলা হলে জবাব চাওয়া হবে।’