কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিনিয়তই অবৈধ অটোরিকশা চালকরা যাত্রী নিয়ে ভারি যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। ফলে প্রতিদিনই এ মহাসড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে ঠিকমত দায়িত্ব পালনে অনীহা থাকায় সড়ক শৃঙ্খলা দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে। এ মহাসড়কে উপজেলার মৌচাক থেকে মির্জাপুর গোড়াই বাসষ্টেশন পর্যন্ত অবৈধ যানবাহনের দখলে রয়েছে বলেও ভুল হবে না।
সোমবার বিকেলে এ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, অবৈধ অটোরিকশা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই মহাসড়কে দ্রুতগতিতে চলছে। কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রাস্থ ত্রিমোড় এলাকার বাসষ্টেশন এলাকায় যেতে দেখা গেছে এসব অবৈধ অটোরিকশা, মাহেন্দ্র নামক সিএনজি। নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগার উপর দিয়ে এসব অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করলেও পুলিশের কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সফিপুর বাজার পয়েন্টে ফ্লাইওভার ব্রীজের নীচে শতাধিক অটোরিকশা নিয়ে চালকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এখানে কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াতকারী অটোচালকরা তাদের অটোরিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছে যাত্রীর জন্য। অথচ এই পয়েন্টে ইউটার্ণ থাকলেও অবৈধ অটোরিকশা অবস্থান করায় ভারি যানবাহনগুলো ইউটার্ণ নিতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। একখানে কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের ভুমিকা নেই। তারা দাঁড়িয়ে থেকে অটোরিকশা চালকদের দাপট দেখছেন বলে মনে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হাইওয়ে পুলিশ জানান, কি করবো ভাই। এইসব অবৈধ অটোরিকশা মহাসড়ক দিয়ে চলাচলে নিষেধ থাকলেও তারা মানছেন না। বিশেষ করে সরকার পতনের পর থেকে অটোচালকরা বেপরোয়াভাবে মহাসড়ক দিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। তাদের কারণে মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকছে।
এ মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় অটোরিকশার কারণে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে। দুইজন পুলিশ সদস্য অটোরিকশা চালকদের মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বললেও তারা কোন কর্ণপাত করছেন না। মৌচাক বাজার এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়। ফলে এখানে হাইওয়ের কোন পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। ফলে এখানে যে যেমনে পারছেন তাদের অবৈধ অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে।
বাসযাত্রী ও পথচারীরা জানান, হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও ফের আবার মহাসড়কে চলছে অটোরিকশা। কয়েক মাসে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে অটোরিকশা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ।
অটোরিকশা চালক মোঃ রফিকুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা পেটের দায়ে মহাসড়কে অটোরিকশা চালাই। মহাসড়কে অটোরিকশা চালাতে পারলে আয় একটু বেশি হয়। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না।
সোহেল রানা নামের আরেক অটোরিকশা চালক বলেন, কয়দিন আগেও গাড়ি ধরে থানায় নিয়ে যেত নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশ। থানা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় মামলা তুলে অটোরিকশা ছাড়িয়ে আনতে হতো। তবে তারা কোন কাগজ বা রশিদ দিতো না।
সফিপুর বাজার ব্যবসায়ী শিপলু মিয়া ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার মুদি দোকানদার ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম বলেন, নাওজোড় হাইয়ে পুলিশ গত কয়েক মাস ধরে সড়কের পাশে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তুলে দিয়েছেন। সেসময় হাইওয়ে পুলিশ আমাদের জানান, মহাসড়কে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়। অথচ মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশার কারণে প্রায়ই যানজট লেগেই রয়েছে এ বিষয়ে পুলিশ নীরব ভুমিকায় রয়েছে।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি রইছ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে বোর্ডঘর নামক এলাকা পর্যন্ত চলাচলকারী অবৈধ অটোরিকশা চালকের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা দেওয়া হচ্ছে। তবে সামনে ঈদ উপলক্ষে এ মহাসড়কে আর অবৈধ যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এসব অবৈধ যানবাহনের চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।