কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনা দ্বারা বিচ্ছিন্ন ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন "যমুনা উপজেলা" বাস্তবায়ন চায় চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় দেড় লাখ মানুষ। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) মূল ভূখন্ড যমুনায় চিরতরে হারিয়ে যাওয়া এই জনপদের মানুষ ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সমাবেশ করেছে।
আজ বিকেলে কাজিপুরের মনসুরনগর, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশ ইউনিয়ন মিলে "যমুনা উপজেলা" ঘোষণার দাবিতে এই সমাবেশ করে এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি প্রস্তাবিত যমুনা উপজেলা শাখার উদ্যোগে এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা জানান, ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা গঠিত। এরমধ্যে ৬টি ইউনিয়ন যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা যমুনা। উপজেলার মোট আয়তন ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত পূর্বাংশেই ২০৩ বর্গ কি.মি. এবং পশ্চিমাংশে নদীসহ ১৬৫ বর্গ কি.মি.। আয়তনে বড় এবং জনবহুল পূর্বপাড়ের ৬ ইউনিয়নের মানুষ কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জের মূল অঞ্চল থেকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন। এ কারণে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশাসনিক সহযোগিতা পাওয়া দুষ্কর। মামলা-মোকাদ্দমার কাজ থাকলে একদিন আগেই রওনা দিতে হয়। যাতায়াতের একমাত্র পথ যমুনা নদী হলেও নেই লঞ্চ বা সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা। প্রতি বছরেই বেশকিছু নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে প্রাণ হারায় অনেক মানুষ।
নামেই কাজিপুর উপজেলা হলেও শুধু প্রশাসনিক প্রয়োজন ব্যতিত ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন কাজের জন্য যোগাযোগের সহজ মাধ্যম সরিষাবাড়ী উপজেলা। সেখানে যেতে সময় লাগে ১০-২০ মিনিট। ৬ ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাবলিক পরীক্ষাও নিয়ন্ত্রণ করে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলে বারমাস বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন এবং বিপুল অংকের টাকা সরকার রাজস্ব পেলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং শিক্ষা ও উন্নয়নবঞ্চিত নদীভাঙা মানুষ। উপজেলার ১৪টি কলেজের মধ্যে পূর্বপাড়ে মাত্র ২টি, ১৪টি কারিগরি কলেজের সবগুলোই যমুনার পশ্চিমপাড়ে। ৫৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টিই পশ্চিমপাড়ে। অর্ধেক জনপদের জন্য মাত্র ১৪টি। ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৯টিই ওপাড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৪টি হাসপাতালের সবগুলোই পশ্চিমপাড়ে। ৮টি ভেটেরিনারির মধ্যে মাত্র একটি এপাড়। এছাড়া ভূমিসেবার জন্যও নেই এপাড়ে মানুষদের জন্য কোনো ব্যবস্থা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কবি আলতাফ হোসেন, গাজী আলী আক্কাস, গোলাম ফারুক বিএসসি, প্রকৌশলী সোহেল রানা, শিপন হৃদয় প্রমুখ। তারা চরাঞ্চলের অবহেলিত মাুনষের বৈষম্য দূর করতে "যমুনা" নামে পৃথক উপজেলা ঘোষণার দাবি জানান।