গাজী জয়নাল আবেদীন, রাউজান(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজানে মাটির ব্যবসার দ্বন্দ্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন বাচলু (৩৮) গুলিবিদ্ধের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল ১৫ ডিসেম্বর (রবিবার) সকালে আহতের পিতা আব্দুস ছালাম বাদী হয়ে ৬জনের নাম উল্লেখ করো অজ্ঞাত আরো ৬-৭জনকে আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেন। রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. আলমগীর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন মৃত শামসুল আলমের ছেলে জানে আলম (৪০), চান্দু মিয়ার ছেলে মো. রুবেল (৩০), আমির হোসেনের ছেলে মো. সেলিম (৩৫), মো. কাশেমের ছেলে বাচা মিয়া (৪০), আব্দুল হাকিমের ছেলে আলী আজগর (৪৫) ও মো. হারুনের ছেলে মো. মামুন (২৯)। এরা প্রত্যকেই উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
মামলার এজহার ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন বাচলু গত শনিবার রাত ১০ টার দিকে রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের আশরাফ আলী চৌধুরী হাট প্রকাশ সোমবাইজ্জ্যেহাট বাজারের আবু তালেব মার্কেটের জননী ফার্মেসীর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় উত্তর দিক হতে ৪ টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে ১৫-২০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে অতর্কিতভাবে আনোয়ার হোসেন বাচলুকে গুলি করে মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক জখম করেন। এই সময় তারা বাজারের সিসিটিভি ক্যামরা ভাংচুর করেন। তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে গুলিবর্ষণ করে করে দক্ষিণ কদলপুরের দিকে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা বাচলুকে উদ্ধার করে প্রথমে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থা খারাপ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা রয়েছেন বলে জানা যায়। গুলিবিদ্ধ আনোয়ার হোসেন বাচলু রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের আমির পাড়া গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সাবের সুলতান কাজল। তিনি এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান এবং ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
গত শনিবার রাতে ঘটনার পর বাজারের দোকান-পাঠ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পরপরই রাউজান থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হোসেন ইবনে নাঈম ভুঁইয়া মামলাটি তদন্ত প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। আমরা আসামীদের গ্রেপ্তার পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ জানান, বিগত ১৫ বছর রাউজানে পাহাড় কাটা, কৃষি জমি ভরাট নিষিদ্ধ ছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কদলপুরের স্থানীয় বেশ কিছু সন্ত্রাসী বিএনপি পরিচয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে দেদারসে পাহাড় কেটে কৃষিজমি, পুকুর-ডোবা ভরাট করেছে। এই জমি ভরাটের ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ্বে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। এরপূর্বেও মাটি ব্যবসার জেরে গত ১ ডিসেম্বর (শনিবার) রাতে একই বাজার হতে বাড়ি ফেরার পথে পথ রোধ করে মোহাম্মদ নাছির (৪৫) নামে এক যুবদল নেতাকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে মৃত ভেবে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। তিনিও ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী। একেরপর এক কদলপুর ইউনিয়ন জুড়ে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।